রাষ্ট্রপতি-মন্ত্রী-ওসি সবার নামেই আইডি আছে ‘ফেসবুক মাস্টার’ আনোয়ারের

গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার একটি প্রেসের কর্মচারী তিনি, পঞ্চম শ্রেণীও পাশ করতে পারেননি। কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, থানার ওসি, ইউপি চেয়ারম্যানসহ অসংখ্য নামে ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে প্রতারণা করছিলেন।

অবশেষে ঢাকার তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) লিটন কুমার সাহা এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের (৩০) বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সদর থানার খোলাবাড়ি গ্রামে। তিনি সেখানকার ইসলাম প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারী ছিলেন।

ওই প্রেস থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের সময় একটি কম্পিউটার, আইপি ক্যামেরা, রাউটার ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদ মহসীন নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি চালাচ্ছিলেন, আইডিতে তিনি তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করেন।

এ বিষয়ে ওসি মহসীন গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় একটি জিডি করেন এবং পরে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি তেজগাঁও থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। 

ওসি মহসীন জানান, গ্রেপ্তার আনোয়ার তার আইডি ছাড়াও রাষ্ট্রপতি, ইউপি চেয়ারম্যান, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, অভিনেতা শান্ত খান, মডেল আব্দুন নূর সজলের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চালাতেন। 

এসব ভুয়া আইডিতে আনোয়ার বিভিন্ন পোস্ট ও ছবি শেয়ার করেন এবং বিভিন্ন সময় মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের ভুয়া আইডির মাধ্যমে ৭৭১ জন নারীর সঙ্গে চ্যাট করেছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, ভুয়া আইডি দিয়ে আনোয়ার নারীদের সঙ্গে আপত্তিকর কথাবার্তা বলতেন। তাদের মধ্যে কারো কারো সঙ্গে ছবি আদান-প্রদান করেছেন। আবার কারো কারো কাছে টাকাও দাবি করেছেন।  

ইউটিউব দেখে দেখে 'ফেসবুক মাস্টার'

পুলিশ জানায়, আনোয়ারের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও, প্রেসে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে ইউটিউব দেখে দেখে ফেসবুকের বিভিন্ন কৌশল শেখেন। এভাবে শিখে শিখে এলাকার বিভিন্নজনের ফেসবুকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দেন।

গ্রাম খোলাবাড়ি ও দাশ বেকারি মোড় এলাকায় তিনি 'ফেসবুক মাস্টার' নামে পরিচিত। কারো আইডি, পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করা, পেজ ভেরিফিকেশন, রিপোর্ট কিংবা স্ট্রাইক খাওয়া পেইজ রিকভারসহ ফেসবুকের যেকোনো সমস্যার সমাধান করে দেন আনোয়ার।

এলাকার নারীরাও ফেসবুক আইডি, পাসওয়ার্ড উদ্ধারে আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। যেসব আইডি উদ্ধার করে দিতেন, সেসব আইডি আনোয়ার নিজের করে নিতেন।
বিশেষ কৌশলে তার কম্পিউটারে ওই আইডিগুলো চালু করে নিতেন এবং পরে নিজে ব্যবহার করতেন। 

এসবের মধ্যে অপেক্ষাকৃত পুরোনো আইডির নাম পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি-মন্ত্রী-ওসির নামে ব্যবহার করতেন আনোয়ার। ভুয়া আইডি রিপোর্ট করে বন্ধ করলেও, কিছুদিন পর আনোয়ার তা রিকভার করে ফেলতে পারতেন।

Comments

The Daily Star  | English

Tribute to July uprising: Drone show lights up Dhaka's sky

In 12 vivid motifs, the July uprising came alive, tracing the heroism of Abu Sayed and the stirring role of women in the movement

13h ago