নরসিংদী

শিক্ষকের প্রতারণা, রেজিস্ট্রেশনের টাকা দিয়েও এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারছে না ৬ শিক্ষার্থী

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পরেও নরসিংদীর রায়পুরায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিতের প্রলোভন দেখিয়ে ৬ শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

প্রবেশপত্র না পাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ওই শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে গিয়েও বসতে পারেননি পরীক্ষার হলে। পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগের আশ্বাস দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

এদিকে অভিযুক্ত নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলামকে বুধবার রাত থেকে এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে ভুক্তভোগী ৬ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগে বলা হয়, ওই পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র হিসেবে রায়পুরা উপজেলার বালুয়াকান্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের কথা জানিয়েছিলেন ওই শিক্ষক।

কিন্তু, সকালে তারা সেখানে গিয়ে পরীক্ষা দিতে না পারায় অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অবস্থান নেন।

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানায়, ব্রাহ্মন্দী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়য়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য চাঁদনী, মেঘলা, তৈয়বা, জান্নাতুল, অর্পিতা সুমাইয়াকে নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার প্রলোভন দেখিয়েছিলেন শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম।

পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ফরম ফি বাবদ ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড এবং প্রবেশপত্র দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

পরীক্ষার্থীদের বৃহস্পতিবার সকালে রায়পুরা উপজেলার বালুয়াকান্দী উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।

কিন্তু, বুধবার রাত থেকে আমিনুল ইসলামের মোবাইল ফোন বন্ধ পান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জানতে চাইলে ব্রাহ্মন্দী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন নাজির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভুক্তভোগী ৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জন আমাদের স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে নবম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় তারা পাস করতে না পারায় তাদের দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করা হয়নি। তাদের পুনরায় নবম শ্রেণীতে ভর্তি হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা সেটা না করে, অন্য স্কুলে ভর্তি হয়।'

নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাইস্কুলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'স্কুলটি আমাদের স্কুলের পাশাপাশি অবস্থিত। হয়তো কোনো চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের ফাঁদে পড়েছে।'

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমিনুল ইসলামের মেয়ে আমাদের সঙ্গেই ব্রাহ্মন্দী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ত। সে সূত্রে উনার সঙ্গে পরিচয়। আমাদের বলা হয়েছে আগেও তাদের স্কুল থেকে একাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সেজন্য আমরা তার দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু উনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।'

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমিনুল ইসলাম স্যার ফরম ফি সহ ১২-১৫ হাজার টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড এবং প্রবেশপত্র দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা পরীক্ষা দিতে পারিনি।'

অভিযুক্ত নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে বা কোথাও না পাওয়া যাওয়ায় এ অভিযোগের বিষয়ে তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।  

যোগাযোগ করা হলে রায়পুরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সামালগীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই বিদ্যালয়টির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে রায়পুরার বালুয়াকান্দি কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। এটা এক প্রকার প্রতারণা।'  

ডিজিটাল গার্লস স্কুলের সাবেক এক শিক্ষক আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনা সংক্রমণের আগেই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং এখনো বন্ধ আছে। আমি তিন বছর আগেই সেখান থেকে চাকরি ছেড়েছি। যতটা জানি প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব নেই।'

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বদিউল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তবে বিদ্যালয়টির অনুমোদনের কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। প্রতারক শিক্ষককের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রচলিত আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Unveil roadmap or it’ll be hard to cooperate

The BNP yesterday expressed disappointment over the absence of a clear roadmap for the upcoming national election, despite the demand for one made during its recent meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus.

8h ago