সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে ধর্ষণ: এক আসামির স্বীকারোক্তি, আ. লীগ নেতার রিমান্ড শুনানি কাল

সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে ধর্ষণ
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।  

আসামি মেহরাজ উদ্দিন (৪৮) আজ বুধবার বিকেলে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।

মামলার প্রধান আসামি চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বারের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানির তারিখ আগামী বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করেছেন আদালত।

নোয়াখালীর আদালত পরিদর্শক মো. শাহ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মেহরাজের জবানবন্দি নেওয়া শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। 

সোমবার দিবাগত রাতে চরওয়াপদা ইউনিয়নে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের ও মেহরাজকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ সিঁদ কাটার কাজে ব্যবহৃত কোদাল, কাঁচি, প্যান্ট ও কানটুপি জব্দ করে।    

যা ঘটেছিল

আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বারের মোবাইল নম্বর ব্লক করার কারণেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে মা-মেয়েকে ধর্ষণ করেন বলে ধারণা করছেন ওই নারীর স্বামী ও চরওয়াপদার ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন।

ওই নারীর স্বামী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বার আমাদের প্রতিবেশী। আমার স্ত্রী তাকে মামা এবং মেয়েরা তাকে নানা বলে ডাকত। গত কয়েকমাস আগে মুন্সি মেম্বার বাড়ি এসে আমার স্ত্রীর মোবাইল নম্বর নেন। তিনি প্রায়ই তাকে ফোন করে আপত্তিকর কথাবার্তা বলতেন। বিষয়টি আমার স্ত্রী একাধিকবার আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু সামাজিক লাজ-লজ্জা ও মেম্বার প্রভাবশালী হওয়ায় বিষয়টি আমরা এড়িয়ে যাই।'

'একপর্যায়ে আমার স্ত্রী মুন্সি মেম্বারের মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হন। কয়েকমাস আগে তিনি আমার স্ত্রীকে বলেন, টাকা-পয়সা লাগলে তার কাছে চাইতে। ১৫-২০ দিন আগে বাড়িতে এসে তিনি আমার স্ত্রীকে মুরগির গ্রিল খাওয়ানোর প্রস্তাব দেন। এসবে আমার স্ত্রী সাড়া না দেওয়ায়, তিনি ক্ষিপ্ত ও প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠেন। এর জেরে সোমবার রাতে মুন্সি মেম্বার আমার অনুপস্থিতিতে বাড়িতে ঢুকে আগে চুরির নাটক সাজিয়ে ধর্ষণ করেন,' বলেন তিনি।

চর ওয়াপদা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি জানতে পেরেছি যে আবুল খায়ের মেম্বার প্রায় ওই নারীকে উত্যক্ত করতেন। একপর্যায়ে তার মোবাইল নম্বর ব্লক করে দিলে, তিনি ওই নারীর ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে গরু ব্যাপারী হারুন ও মেহেরাজকে নিয়ে তিনি চুরির নাটক সাজিয়ে মা-মেয়েকে ধর্ষণ করেন।'

তিনি জানান, আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বার ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তিনি কোনো সম্মেলন ছাড়াই প্রায় ১৭ বছর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে ছিলেন। 

জাকির হোসেন আরও বলেন, 'মুন্সি মেম্বার ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ভার্টিরটেক এলাকায় এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। ১৯৯৫, ২০০৫ ও ২০১০ সালে তিনি চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হন।'

জানতে চাইলে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আবুল খায়ের মেম্বারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাই তাকে দলীয় পদ থেকে মঙ্গলবার রাতে বহিষ্কার করা হয়েছে।' 

বুধবার দুপুরে ওই নারী ও তার মেয়ের সঙ্গে কথা হয় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে। ওই নারী বলেন, 'ধর্ষণ করে চলে যাওয়ার সময় মুন্সি মেম্বার আমাদের হুমকি দিয়ে বলেন যে, যদি কাউকে এই ঘটনা জানাস, তাহলে তোদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিব। যদি কাউকে বলিস কিংবা মামলা করিস তাহলে খবর আছে। হাসপাতালে তো নিরাপদেই আছি। বাড়ি গিয়ে কীভাবে থাকব?'

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার মেহেরাজের বরাত দিয়ে বলেন, 'আবুল খায়েরের ঘনিষ্ঠ একই এলাকার বাসিন্দা গরু ব্যাপারী হারুন ওই নারীর ঘরে টাকা আছে লোভ দেখিয়ে মেহেরাজকে চুরি করতে পাঠান। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেহেরাজ সোমবার রাতে ওই নারীর ঘরে সিঁধ কেটে ঢুকে দরজা খুলে দেন। পরে আবুল খায়ের ও হারুন ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে ধর্ষণ করেন। পরে মেহেরাজ মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Early US intel assessment suggests strikes on Iran did not destroy nuclear sites: CNN

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu said Israel had agreed to Trump's ceasefire proposal

2d ago