দেশে না থেকেও মানবপাচার মামলার আসামি যুবদল নেতা, যাকে চেনেন না বাদীও

‘যদি প্রমাণিত হয় এই মামলার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে তার নাম মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।’
যুবদল নেতা মতিউর রহমান সাগর। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইটি মামলা হয়েছে মানবপাচারের অভিযোগে। কিন্তু এ দুটি ঘটনার সময় তিনি ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরবে ছিলেন বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি মামলায় ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

মামলার এজাহার ও জামিননামা অনুযায়ী, মাদারীপুরের বাসিন্দা মো. ইলিয়াছ আকন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির ঘটনায় ২০২৩ সালের ৩ মে যুবদল নেতা মতিউরসহ বিভিন্ন জেলার ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে মানবপাচারের অভিযোগে মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়, বাদী ইলিয়াছের ছেলে ইসমাইলকে মামলার এক নম্বর আসামি হাজী আহমদ আলী ইতালি যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে তারা রাজি হয়ে ১৮ লাখ টাকার চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর আট লাখ টাকা দেওয়া হয় এবং ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ইতালি যাওয়ার ফ্লাইট বলে আসামিরা জানায়।

ফ্লাইটের আগের দিন ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তিন হাজার ইউরো নিয়ে ঢাকার পল্টনে যুবদল নেতা মতিউরের ট্রাভেল এজেন্সি সাগর ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসে যেতে বলা হয় ইসমাইলকে। ইসমাইল সেদিন সেখানে গেলে, মতিউর ও তার তিন সহযোগী আউয়াল, রাসেল ও রাশেদ কৌশলে তার কাছ থেকে দেড় হাজার ইউরো নিয়ে নেয়। পরে ১৬ ঘণ্টা বসিয়ে রেখে ইসমাইলকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু মতিউরের পাসপোর্টে থাকা সৌদি আরবের ভিসা ও ইমিগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সৌদি আরবে ছিলেন মতিউর। ওমরাহ পালন শেষে ৯ মার্চ তিনি দেশে ফেরেন।

ওই মামলায় চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) মতিউরকে গ্রেপ্তার করে।

কিন্তু আদালত মতিউরের পাসপোর্টে ইমিগ্রেশনের তথ্য দেখে তাকে জামিন দেন।

পরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর মামলায় মতিউরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে ২৭ ফেব্রুয়ারি জামিন পান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মানবপাচার মামলার বাদী ইলিয়াছ আকন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি মতিউর রহমানকে কখনো দেখিনি ও চিনি না। আমার বাড়ি রাজৈর, তার বাড়ি শরীয়তপুরে। আমার ছেলে ইসমাইল লিবিয়া থাকে। সে কাকে কখন কীভাবে টাকা দিয়েছে, আমি তা জানি না।'

লেনদেন না থাকলে বা না চিনলে একজনকে আসামি করেছেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'নুরু নামে একজন আমার ছেলের সঙ্গে লিবিয়া থাকেন। তিনি আমার ছেলেকে দিয়ে মতিউর রহমান সাগরের নাম দিয়েছেন। তাই তার নামে মামলা দিয়েছি। এর বেশি কিছু আমি জানি না।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার আসামি মতিউর রহমান সাগর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি নড়িয়া উপজেলার চেয়ারম্যানপ্রার্থী। আমি মনেপ্রাণে একজন বিএনপিকর্মী। বিএনপি করার কারণে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে। এ রকম ছয়টি রাজনৈতিক মামলা আছে আমার বিরুদ্ধে।'

তিনি বলেন, 'মাদারীপুরের একজন একটি মানবপাচার মামলায় আমাকে আসামি করেছেন। কিন্তু সেসময় আমি সৌদি আরব ওমরায় ছিলাম।'

'এর আগে ২০২২ সালে মানবপাচারের আরেকটি মামলায় ২৫ মে আমাকে নড়িয়া থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তখনো আমি সৌদি আরবে ওমরায় ছিলাম। আদালত আমার ওমরা হজের ভিসা ও ইমিগ্রেশনের কাগজ দেখে জামিন দিয়েছেন', বলেন তিনি।

এই যুবদল নেতা আরও বলেন, 'এই দুই মানবপাচার মামলার বাদী ও অন্য আসামিরা কেউ আমাকে চেনেন না। শুধু রাজনৈতিক কারণে আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজমের তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাদারীপুরের ইলিয়াছ মানবপাচার মামলা মোহাম্মদপুর থানায় করেন। পরে মামলাটি কাউন্টার টেররিজমে হস্তান্তর করা হয়। তখন আমার ওপর এটি তদন্তের দায়িত্ব পড়ে। বিস্তারিত তদন্তের পর দেখব মতিউর রহমান সাগর ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না।'

'যদি প্রমাণিত হয় এই মামলার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে তার নাম মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে', বলেন তিনি।

Comments