আদালতের ভেতরে নরসিংদী জেলা ছাত্রদল সভাপতির জন্মদিন পালন

পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগও উঠেছে।
নাহিদের জন্মদিন পালন। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদী জেলা ও দায়দা জজ আদালতের ভেতরে নিয়ম লঙ্ঘন করে হত্যা মামলার আসামি ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান নাহিদের জন্মদিন পালন করার অভিযোগ উঠেছে। জন্মদিন পালনকালে মোবাইলে ভিডিও কলে তিনি কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেন।

এই ঘটনায় নাহিদের নিয়ম লঙ্ঘনের পাশাপাশি পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগও উঠেছে।

আদালতে কর্তব্যরত পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগটি পুলিশ সুপারকে (এসপি) অবহিত করার পর আজ রোববার বিষয়টি সবার নজরে আসে।

নরসিংদী আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জমান বলেন, 'ঘটনা গত ৫ মার্চের। নাহিদকে হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে গারদে আনা হয়েছিল। সেদিন আমাদের কিছু পুলিশ সদস্যের সহায়তায় তার কিছু বন্ধু নিয়ে তিনি কেক কেটে জন্মদিন পালন করেছেন। আমরা বিষয়টি ইতোমধ্যে অবহিত হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।'

'আইন ভঙ্গ করে গারদের ভেতরে এসব অনিয়ম করা হচ্ছে। আদালত পুলিশের পক্ষ থেকে এসপিকে জানানো হয়েছে। গত দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। দু-এক দিনের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে', বলেন তিনি।

ছিদ্দিকুর রহমান নাহিদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে জানা যায়, তার জন্মদিন ছিল গত ৫ মার্চ। তিনি হত্যা-অস্ত্রসহ প্রায় ৩০টির বেশি মামলার আসামি। জন্মদিন পালনের সময় নাহিদের বাম হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো ছিল।

জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর ঢাকা থেকে অস্ত্রসহ নাহিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোকন চন্দ্র সরকার। এরপর থেকে একটি হত্যা মামলায় তিনি কারাগারে আছেন।

ছবি ভিডিওতে দেখা যায়, একাধিক গ্রুপ একাধিক জন্মদিনের কেক নিয়ে আদালতের গারদে উপস্থিত হয় এবং পুলিশের সহায়তায় তারা জন্মদিন পালন করেন। তা ছাড়াও নাহিদকে ভিডিও কলে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।

সেসময় জেলা যুবদলের সদস্য যুম্মন পাল, মাধবধী স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি আহ্বায়ক শাহাদাৎ রাজীব, মাধবধী যুবদলের সদস্য সচিব অপু ও একই কমিটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আল আমিন, নরসিংদী সদর উপজেলার নূরালাপুর ইউনিয়ন শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজগর আলীসহ আরও অনেকে অংশ নেন।

গত বছরের ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে পদ না পেয়ে ওইদিন রাতেই কিছু নেতাকর্মী বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়টিতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। পরের কয়েক মাসে সেখানে আরও কয়েকবার হামলার ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যেই সবশেষ ২৫ মে নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান ও আশরাফুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে এ হত্যা ঘটে।

মামলার বাদী ও নিহত সাদেকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বলেন, 'ভাইকে হারিয়ে আমরা মর্মাহত। সেখানে ছাত্রদলের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান নাহিদের নেতৃত্বে ও সরাসরি অংশগ্রহণে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়। আবার সেই হত্যাকারী আদালতের গারদে বসে পুলিশের উপস্থিতিতে আনন্দ-উল্লাস করে জন্মদিন পালন করে, সেটা কতটা কষ্টের তা ভাই হারানো ব্যক্তি ছাড়া কেউ বুঝবেন কি না আমি জানি না। যারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পবিত্র আদালতে এজলাসের পাশে বসে জন্মদিন পালন করেন এবং যারা সহায়তা করেছেন, তাদের শাস্তির দাবি করছি।'

নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'ছুটিতে থাকায় আজ আমাদের লোকজনের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি যে, একজন আসামি হাজিরা দিতে গিয়ে গারদের ভেতরে জন্মদিন পালন করেছেন এবং ভিডিও কলে কথা বলেছেন। পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা হয়েছে কি না, তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম বলেন, 'আদালতের ভেতরে কেক কেটে জন্মদিন পালন করার সুযোগ নেই। তা ছাড়াও ভিডিও কলে কথা বলার প্রশ্নই আসে না। তবে, কারাগার থেকে অনুমতি সাপেক্ষে জেল সুপার কর্তৃক নির্ধারিত মাধ্যমে কয়েদি কথা বলতে পারবেন। তবে আদালতে জন্মদিন পালন বা ভিডিও কলে কথা বলা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। যদি এসব আদালতে ঘটে, তাহলে সেটা প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।'

Comments