গুলি ছুড়তে ছুড়তে থানচি ছাড়ে ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী

থানচি বাজারে প্রবেশ করার পথে গাড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

বান্দরবানের থানচি উপজেলা বাজারে সোনালী ব্যাংক কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখায় ডাকাতিতে অংশ নেন ৪০-৫০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনটি গাড়িতে চড়ে এসে তারা দুই দলে ভাগ হয়ে দুটি ব্যাংকে ঢোকেন। অন্যরা অবস্থান নেন বাইরে বাজারে। মুহূর্তেই ব্যাংক থেকে টাকা লুটে নিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এলাকা ত্যাগ করেন তারা।

থানচি বাজারে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা এই বর্ণনা দিয়েছেন। তারা জানান, প্রতি বুধবার থানচিতে সাপ্তাহিক বাজার বসে। আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন এদিন উপজেলা সদরে ভিড় করেন। এ কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ ব্যাংকেও বেশি ভিড় ছিল।

ডাকাতির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হাই মং মারমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে সোনালী ব্যাংকে ঢুকে ম্যানেজারকে খুঁজতে থাকে। তাকে তারা পায়নি। পরে ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা লুট করে পালিয়ে যায় তারা।

সশস্ত্র দলটির সঙ্গে কয়েকজন নারী ছিলেন জানিয়ে এক ব্যবসায়ী বলেন, ডাকাতির সময় আমরা ব্যাংকের ভেতরে ছিলাম। প্রায় ১৫ জন সন্ত্রাসী ব্যাংকে ঢুকে সবাইকে হাত ওপরে তুলতে বলে কয়েক জনের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখে। ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা বস্তায় ভরে তারা চলে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষক বলেন, সন্ত্রাসীরা হলিউডের স্টাইলে ব্যাংকে ঢুকে চোখের পলকে ব্যাংকে থাকা সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। আমাদের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখে। সবার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে সবাইকে একটি কক্ষে আটকে টাকা লুট করে পালিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা অংসিং মারমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, টিএনটি পাড়া, ছান্দাক ও সাইজান বম পাড়ার দিক থেকে তিনটি চাঁদের গাড়িতে করে সন্ত্রাসীরা বাজারে ঢোকে। ওদের একটি অংশ আগে থেকেই বাজারে অবস্থান নিয়েছিল। দলের অন্যরা আসার পর সবাই অস্ত্র বের করে বাজারে লোকজনকে নড়াচড়া করতে নিষেধ করে দেয়।

ডাকাতি হওয়া ব্যাংকের শাখা দুটি থানচি উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর একশ মিটারের মধ্যেই থানা পুলিশ ও বিজিবি ক্যাম্প। সামনে সাঙ্গু ব্রিজ ও থানচি হাই স্কুল। হাই স্কুলের সামনেই থানচি বাজার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও চাঁদের গাড়ির স্টেশন।

এই ঘটনার প্রায় ১৬ ঘণ্টা আগে একই জেলার রুমা বাজারের সোনালী ব্যাংকে হানা দেয় সন্ত্রাসীরা। নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করে ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে তারা। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল করিম বলেন, গতকালের গ্রুপটিই এটা করেছে। গতকালের ঘটনার তদন্তে কোনো অগ্রগতি এখনো হয়নি।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বলেন, গতকাল রুমায় হামলাকারী সন্ত্রাসীরাই আজ থানচিতে হামলা করেছে। তারা সোনালী ব্যাংক থেকে ১৪-১৫ লাখ টাকা, আর কৃষি ব্যাংক থেকে ৪-৫ লাখ টাকা লুট করেছে বলে জেনেছি। তবে ভল্টে থাকা টাকা নিয়ে যেতে পারেনি।

স্থানীয়রা জানান, ব্যাংক থেকে টাকা লুট শেষে সন্ত্রাসীরা থানচি বাজারে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে। চারটি জিপে চড়ে প্রায় ৪০-৫০ জনের মতো সন্ত্রাসী আবার টিএনটি, ছান্দাক, ও সাহজান পাড়ার সড়কের দিকে চলে যায়।

বান্দরবানের জেলার প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রুমা ও থানচিতে সন্ত্রাসীদের হামলা ও একজন ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের পর জেলার সর্বস্তরে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Can Bangladesh ride out the wave of US tariffs?

Trump's announcement sent businesses scrambling. Orders froze. Buyers demanded discounts. Stock markets plummeted.

11h ago