চনপাড়ায় যুবদলের ২ পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ১

আজ সকালে পুলিশ ও র‍্যাব যৌথভাবে চনপাড়ায় অভিযান চালায়। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়ায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বুধবার ভোর পর্যন্ত স্থানীয় যুবদলের দুই পক্ষের নেতাকর্মীর মধ্যে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়। 

এ সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন এবং গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও দুজন।

জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত মো. হাসিব (২৮) চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন।

নিহতের বড়ভাই যুবদলকর্মী মো. বাবু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংঘর্ষ চলাকালে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে হাসিব গুলিবিদ্ধ হন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারি রবিনকে আটক করে চনপাড়া সাংগঠনিক ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মনির দেওয়ানের অনুসারীরা। পরে তাকে স্থানীয় যুবদল কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে সেখানে যান ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল করিম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি গোলাম রাব্বানী। এ নিয়ে উভয়পক্ষের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে তা দফায় দফায় সংঘর্ষে রূপ নেয়।

স্থানীয় অন্তত দুজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাতাহাতির ঘটনার পর উভয়পক্ষের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র, টেঁটা, শাবল ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ভোর পর্যন্ত দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।'

যোগাযোগ করা হলে যুবদল নেতা মনির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চনপাড়াকে মাদকমুক্ত করার চেষ্টা করছি আমরা। গতরাতে এক চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারিকে আটক করে লোকজন যুবদল কার্যালয়ে নিয়ে আসে। পরে তাকে ছাড়িয়ে নিতে আমাদের ওপর হামলা করেন আমাদের দলেরই রাব্বানী, করিম ও তাদের অনুসারীরা। আমরা তাদের প্রতিরোধ করেছি। কিন্তু কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করিনি।'

তবে, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন মনির।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে আব্দুল করিম ও মো. রাব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে তারা এলাকায় নেই বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চনপাড়ার এক বিএনপি নেতা বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের আগে চনপাড়ার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর অনুসারীরা। আগস্টের পর বিএনপির কয়েকজন নেতা মাদক চোরাকারবারিদের আশ্রয় দিচ্ছেন এবং তারা চনপাড়ায় আধিপত্য বিস্তার করছেন। এ নিয়ে বিএনপির লোকজনের মধ্যেও কয়েকটি ভাগ তৈরি হয়েছে।'

জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চনপাড়ায় যুবদলের দুইপক্ষের মধ্যে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের বিষয়টি শুনেছি। অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের ব্যাপারে আরও খোঁজখবর করে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, 'বুধবার সকালে র‌্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে চনপাড়ায় যৌথ অভিযান চালানো হয়। তবে, সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।'

বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাহ উদ্দিন কাদের।

Comments

The Daily Star  | English

Price war in the garment sector: Exporters fear a race to the bottom

With China, Vietnam and Cambodia vying for market share, Bangladeshi exporters fear a race to the bottom on prices -- one they may not win

10h ago