নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর মুক্তি স্বস্তির নাকি বিচারের নামে প্রহসন, প্রশ্ন সারা হোসেনের

ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বস্তির, নাকি বিচারের নামে প্রহসন? এমন প্রশ্ন রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন।

আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক লেখায় তিনি বলেন, 'জুলাই অভ্যুত্থানের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার জামিন এবং মুক্তির বিষয়টি একটি উজ্জ্বল দিক। তবে এটি কি স্বস্তির, নাকি বিচারের নামে প্রহসন? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মন্তব্যগুলো থেকে বোঝা যায়, অধিকাংশ মানুষ দ্বিতীয়টিকেই সত্য বলে মনে করেন। এ ঘটনা আমাদের সামনে যে মৌলিক প্রশ্নগুলো তোলে, তা খুবই গভীর এবং উদ্বেগজনক।'

সারা হোসেন বলেন, 'প্রথমত, পুলিশ কেন ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করল—যখন তাদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম অনুসন্ধানেই জানা যেত, যেসব ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে তার জড়িত হওয়ার সুযোগ আছে কি না? কারণ তিনি দেশেই ছিলেন না। দ্বিতীয়ত, সরকারি কৌঁসুলি কেন তার জামিন না দেওয়ার আবেদন করলেন? তৃতীয়ত, সংশ্লিষ্ট বিচারক কেন তার জামিন নামঞ্জুর করে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দিলেন? চতুর্থত, কেন কোনো সরকারি আইন কর্মকর্তা এমন কোনো উপায় খুঁজে পেলেন না, যাতে ফারিয়াকে ৪৮ ঘণ্টা তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত না হতে হয়?'

'কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ৪৮ ঘণ্টা খুবই কম সময়, যখন অনেকে একই ধরনের মিথ্যা অভিযোগে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর কারাবন্দি থাকেন। কিন্তু ৪৮, ৪৮০ বা ৪৮০০ ঘণ্টা হোক—যথাযথ কারণ ছাড়া কাউকে আটক রাখা অবশ্যই তার ব্যক্তি স্বাধীনতার বড় লঙ্ঘন', বলেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, 'তাহলে এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ কর্মকর্তা, কৌঁসুলি ও বিচারককে জবাবদিহির আওতায় কে আনবে? তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে? তাদের কেউ কি ক্ষমা চাইবেন? অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সদস্য কি এ ঘটনায় (অনুরূপ অন্যান্য ঘটনায়) নিজেদের ভূমিকা বা নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে আত্মসমালোচনা করবেন? তারা কি শুধু দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাবেন, নাকি উপলব্ধি করবেন যে এ মুহূর্তে তাদের ভূমিকা আরও কার্যকর হওয়া উচিত? আমাদের সুপ্রিম কোর্ট কি স্বপ্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন অথবা ভবিষ্যতের জন্য নির্দেশনা দেবেন? নাকি তারা এ ধরনের নির্বিচার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা সম্পর্কে কোনো তদন্ত করবেন?'

তিনি উল্লেখ করেন, 'সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আলোচনাগুলো অর্থহীন ও ফাঁপা হয়ে থাকবে, যদি না আমরা এখনই সংস্কারের প্রতিফলন ঘটাই, এমন কোনো বাস্তব পদক্ষেপ না দেখি। এর মানে হলো, কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ—অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব সদস্য মানবাধিকারের পক্ষের কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত, তাদেরই এগিয়ে এসে এই কার্যক্রমগুলোর জন্য সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে এবং ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর মানে হলো, তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে যেন ব্যক্তিগত প্রতিশোধ, ব্যক্তিগত লাভ অথবা নিছক নারীবিদ্বেষ কিংবা কারও প্রতি শত্রুতার জেরে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। এর বিরুদ্ধে নাগরিকদের প্রতিবাদের সময় এসেছে।'

সারা হোসেন আরও বলেন, 'ফারিয়ার গ্রেপ্তার জনঅসন্তোষ ও ক্ষোভকে যেমন জাগিয়ে তুলেছে, তেমনটি দেখা গেছে কয়েক দিন আগে আরেক নাট্যব্যক্তিত্ব ইরেশ যাকেরকে মামলায় জড়ানোর ঘটনায়। এ ধরনের মামলায় বহু অখ্যাত ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের সাধারণ জনগণের উচিত জোর দাবি তোলা—যারা জুলাই বিদ্রোহ চলাকালীন সংঘটিত ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপরাধের শিকার হয়েছেন, সরকার যেন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সত্য, ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা এবং ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দেয়।'

Comments