মানব পাচার

রাশিয়ায় চাকরির কথা বলে যুদ্ধের সৈনিক হিসেবে বিক্রি করতেন আলমগীর

মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন | ছবি: পুলিশের সৌজন্যে

রাশিয়ায় চকলেট ফ্যাকটরিতে শ্রমিক, ক্লিনার বা বাবুর্চির চাকরি। মাসে বেতন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা—এমন প্রলোভনে পড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন।

ওমরাহ ভিসায় ২৪ বছর বয়সী এই যুবক প্রথমে গিয়েছিলেন সৌদি আরব। তার সঙ্গে ছিলেন আরও ১০ জন। সেখানে বাধে বিপত্তি। দাস হিসেবে এক সুলতানের কাছে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর তিনি ১০ জনকে রাশিয়ান সোলজারদের কাছে হস্তান্তর করেন।

শুরু হয় তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ। এরপর ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের পালা। ভাগ্যক্রমে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালাতে সক্ষম হন আকরাম এবং নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

আকরাম জানান, যুদ্ধে অংশ নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে ক্যাম্পে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার বন্ধ করে দেওয়ার হয়।

তার সঙ্গে বিদেশে গিয়েছিলেন নাটোরের সিংড়া থানার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির ও ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল। দেশে ফিরে তিনি বাকিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আকরাম তাদের জানান, যুদ্ধে হুমায়ুন নিহত এবং আমিনুল গুরুতর আহত হয়েছেন।

সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমিনুলের স্ত্রী ঝুমু আক্তার ঢাকা মহানগর পুলিশের বনানী থানায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৬, ৭, ৮ ও ৯ ধারায় মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা নম্বর চার।

মামলাটির তদন্ত ‍শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোররাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে এই মানবপাচার চক্রের মূলহোতা মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইনকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিআইডির টিএইচবি (মানব পাচার প্রতিরোধ) শাখার সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, আলমগীরের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার আমতলী মাঝেরপাড়া গ্রামে। তিনি মোহাম্মদ ইছহাক ও জয়নাব বেগমের সন্তান। শুক্রবার আলমগীরকে আদালতে হাজির করেছিল পুলিশ এবং ১৬৪ ধারায় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সিআইডি তদন্তে আরও উঠে এসেছে, একইভাবে ১০ জনের আরেকটি দলকে সৌদি আরব নেওয়া হয়েছে এবং তারা সেখানেই অবস্থান করছেন। যুদ্ধে নামানো হবে জানার পর তারা রাশিয়া যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যে কারণে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পাসপোর্ট না থাকায় তারা দেশে ফিরতে পারছেন না।

পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

জসীম উদ্দিন খান আরও জানিয়েছেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিআইডির টিএইচবি শাখার সদস্যরা গ্রেপ্তার করে।

তামান্নার বাবার নাম মো. শহিদুল ইসলাম ও মায়ের নাম পিয়ারা বেগম। তারা রাজধানীর দক্ষিণখান আশকোনা হাজী ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা।

তামান্না ড্রীম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার বলে জানান জসীম।

Comments

The Daily Star  | English

South Africa win World Test Championship to end trophy drought

South Africa won the World Test Championship on Saturday, completing a remarkable turnaround to beat Australia by five wickets as they successfully chased down an imposing 282-run target.

3h ago