নির্বাচনে আ. লীগের স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী: কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ১৮ মন্ত্রী

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের চেয়ে প্রায় ৭০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি এবং দলের টিকিট পাওয়া ৪০ জনেরও বেশি প্রার্থীকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তুমুল লড়াই করতে হবে।

আগামীকালের নির্বাচনে 'আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের' কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা মন্ত্রিসভার অন্তত ১৮ সদস্যের ভাগ্য অনিশ্চয়তার মুখে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের চেয়ে প্রায় ৭০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি এবং দলের টিকিট পাওয়া ৪০ জনেরও বেশি প্রার্থীকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তুমুল লড়াই করতে হবে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা প্রায় ১১০টি আসনে সহজে জয়লাভ করতে পারেন কারণ সেখানে তাদের শক্তিশালী কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।

দলীয় প্রচারণার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলে ডেইলি স্টার এসব তথ্য জানতে পেরেছে।

মন্ত্রীদের মধ্যে চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ও সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক ভূঁইয়ার কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। নওগাঁ-১ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামান তোতা টক্কর দিচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে।

লালমনিরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় স্বতন্ত্র ও লালমনিরহাট আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল হককে হারানোর চেষ্টা করছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং পিরোজপুর-১ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

গাজীপুর-১ ও গাজীপুর-২ আসনের দুই মন্ত্রী-- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি কাজী আলিম উদ্দিনের মধ্যে কাটায় কাটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে।

আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এবং মনোহরদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম হিরু নরসিংদী-৪ আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের চেয়ে বেশি ভোটার সমর্থন পাচ্ছেন বলে প্রচারণায় জড়িত আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা ও রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়ার সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে আছেন।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর চেয়ে স্বতন্ত্র ও যুবলীগ নেতা সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ভোটারদের মনোযোগ বেশি পাচ্ছেন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে নাটোর-৩ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সিংড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক।

রাজশাহী-৬ আসনে স্বতন্ত্র ও চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহেনুল হকের বিপরীতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম পিছিয়ে আছেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।

নেত্রকোনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের কাছে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু।

মেহেরপুর-১ আসনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নানের সমানে সমানে লড়াইয়ে আছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। অন্যদিকে ঢাকা-১৯ আসনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানকে জিততে হলে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদ ও আশুলিয়া থানা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।

জামালপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনুর রহমান শাহিনকে পরাজিত করা ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের জন্য কঠিন হবে।

পাবনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ও সাবেক মন্ত্রী আবু সাঈদ বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় জয় পাওয়া কঠিন হতে পারে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর জন্য।

অন্যদিকে ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্লাহ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরীর চেয়ে পিছিয়ে আছেন এবং ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির সাবেক নেতা ও সদ্য নিবন্ধিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবিলা করতে হবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমানকে।

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় স্বতন্ত্র ও তৎকালীন মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সালের সঙ্গে এবং নেত্রকোনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি।

নেত্রকোনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেনকে পরাজিত করা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেনের জন্য কঠিন হবে।

আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়াও তৃণমূল বিএনপি, কল্যাণ পার্টি, জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদের অনুগত), বিএনএম ও বিএনপির সাবেক নেতারাও জয়ী হতে পারেন।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, তারা হলেন টাঙ্গাইল-৮ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নেতা কাদের সিদ্দিকী, টাঙ্গাইল-৪ আসনে স্বতন্ত্র ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ সিদ্দিকী এবং সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র ও আঞ্জুমানে আল ইসলাহ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের সভাপতি হুসামুদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, কক্সবাজার-১ আসনে বহিষ্কৃত কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বগুড়া-১ আসনে সাবেক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ শোকরানা, বগুড়া-৪ আসনে সাবেক বিএনপি নেতা জিয়াউল হক মোল্লা, বগুড়া-৬ আসনে সরকার বাদল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সাবেক বিএনপি নেতা সৈয়দ একরামুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে সাবেক বিএনপি নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, ফরিদপুর-১ আসনে বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সাবেক বিএনপি নেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, পিরোজপুর-৩ আসনে রওশনপন্থী রুস্তম আলী ফরাজী, রংপুর-১ আসনে মসিউর রহমান রাঙ্গা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জিয়াউল হক মৃধা।

Comments