নাশকতা-সহিংসতার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন: সিইসি

সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগে আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
সিইসি
আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ছবি: পিআইডি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, 'নাশকতা ও সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। তারপরও আমরা জনগণকে অনুরোধ করছি, আপনারা সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।'

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগে আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি এ কথা বলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিগত প্রশ্নে মত-বিরোধের কারণে এবারের নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। নির্বাচনী  সার্বজনীনতা প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। তারপরও ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। মোট ১ হাজার ৯৭১ জন প্রার্থী ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় মর্মে আখ্যায়িত করা যাবে না।'   

তিনি বলেন, 'অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন। কিন্তু, নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক নেতৃত্বে মতভেদ আছে। মতভেদ থেকে সহিংসতা কাম্য নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় নাশকতা ও সহিংসতা যে একেবারেই হচ্ছে না, তা বলা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় সম্পদের পাশাপাশি মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে। চলমান এ অবস্থার স্থায়ী সমাধান ও অবসান প্রয়োজন। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এ বিষয়ে আন্তরিক ও উদ্যোগী হতে হবে।'

কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, 'নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো সহিংস পন্থা পরিহার করে কেবল শান্তিপূর্ণ পন্থায় নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে জনমনে আস্থা সঞ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু, অবরোধ ও হরতালের মধ্যে সহিংসতা দৃশ্যমান হচ্ছে। ট্রেনে-বাসে-ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া হচ্ছে। কারা দায়ী সেটি  আমাদের বিবেচ্য নয়। তবে, নাশকতা ও সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। তারপরও আমরা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে আমরা জনগণকে অনুরোধ করছি, আপনারা সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।'

তিনি বলেন, 'অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থী ও ভোটারদের নির্বাচন বিষয়ক বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হবে। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সব কর্মকর্তাকেও আইন ও বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুধাবন, প্রতিপালন ও প্রয়োগ করে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার সার্বিক বিষয়ে আরোপিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শৈথিল্য, অসততা  ও ব্যত্যয় সহ্য করা হবে না। নির্বাচন বিষয়ক আইন ও বিধি-বিধান বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পর্যাপ্ত  প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ ভোটকেন্দ্রসমূহের  পারিপার্শ্বিক শৃঙ্খলাসহ প্রার্থী, ভোটার, নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশিশক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রার্থিতা তাৎক্ষণিক বাতিল করা হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোট গ্রহণ  সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।'

এ সময় তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ধরনের নির্বাচনী অনিয়ম প্রতিহত করার আহ্বান জানান।  

সিইসি জানান, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রায় ২৩ হাজার দেশি ও প্রায় ২০০ বিদেশি পর্যবেক্ষক কাজ করবেন। 

ভোট দেওয়ার সময় কোনো বাধার সম্মুখীন হলে তিনি প্রিজাইডিং অফিসারকে জানানোর আহ্বান করেন। 

সিইসি বলেন, 'প্রিজাইডিং অফিসার যে কোনো মূল্যে যে কোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করে ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বাধ্য। প্রিজাইডিং অফিসারকে সহায়তা করতে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট অবস্থান  করবে।'

'নির্বাচনের অন্যতম অনুসঙ্গ কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা' উল্লেখ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাহসী, সৎ, দক্ষ ও অনুগত পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করে প্রার্থী হিসেবে আপনাদের নিজ নিজ অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টা আপনাদেরই করতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোলিং এজেন্ট না থাকলে সম্ভাব্য ভোট কারচুপি কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব নাও হতে পারে। নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত সব কর্মকর্তা সৎ, নিরপেক্ষ  ও অবিচল থেকে আইন ও বিধি-বিধান অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যথা হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
 

 

  

Comments

The Daily Star  | English
pharmaceutical industry of Bangladesh

Pharma Sector: From nowhere to a lifesaver

The year 1982 was a watershed in the history of the pharmaceutical industry of Bangladesh as the government stepped in to lay the foundation for its stellar growth in the subsequent decades.

16h ago