গাইবান্ধা-৫

সাঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যানের হাত-পা ভেঙে দিলেন নৌকার বিজয়ী রিপনের সমর্থকরা

গাইবান্ধা-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় নৌকার বিজয়ী প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের সমর্থকরা সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও গাইবান্ধা জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীরকে মেরে গুরুতর আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও গাইবান্ধা জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর হামলায় গুরুতর আহত। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধা-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় নৌকার বিজয়ী প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের সমর্থকরা সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও গাইবান্ধা জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীরকে মেরে গুরুতর আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার বিকেলে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত জাহাঙ্গীরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত ৮টার দিকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রুহুল আমিন।

তিনি বলেন, 'জাহাঙ্গীরের দুই পা এবং একটি হাতের উপরের দিকে ভেঙে গেছে। তার মাথার পেছনে ভোঁতা কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে এবং তার বাম পায়ের নিচে একটি ফুটো আছে, যা দিয়ে বেশ রক্তক্ষরণ হয়েছে।'

পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা রাব্বী বুবলীর (প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে) প্রধান এজেন্ট হওয়ায় রিপনের সমর্থকরা তার ওপর হামলা করেছে।

তারা জানান, এক আত্মীয়ের জানাজা শেষে মা ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে জাহাঙ্গীরের ওপর এ হামলা হয়। 

পরে হামলাকারীরাই আহত জাহাঙ্গীরকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় বলে জানান তার মা জহুরা বেগম।

হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আজ আমার এক চাচাতো ভাই মারা গেছেন। আমরা তার জানাজা শেষ করে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ফিরছিলাম। ভরতখালী এলাকায় হঠাৎ ৪০-৫০ জন লোক লাঠিসোটা ও লোহার রোড নিয়ে আমাদের অটোরিকশাটি অবরোধ করে। আমার ছেলেকে টেনে-হিঁচড়ে নামায়। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে ছেলেকে মেরে একটি অটোরিকশায় তুলে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।'

হামলাকারীরা কারা? জানতে চাইলে প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার বোন পরিচয় দিয়ে জাহাঙ্গীরের মা বলেন, 'তারা নৌকার বিজয়ী প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের লোক। হামলার নেতৃত্ব দেয় সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট। আমার ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা রাব্বী বুবলীর পক্ষে কাজ করায় তারা এই হামলা করেছে।'

এ বিষয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ফুফাতো ভাই জাহাঙ্গীরের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। আমরা তাকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।'

'জাহাঙ্গীর আমার প্রধান এজেন্ট ছিল, এটাই তার দোষ। রিপনের লোকজন আমার ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা করেছে', যোগ করেন তিনি।

সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমতাজুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাহাঙ্গীরকে তার মা ও স্ত্রীর সামনে অমানবিকভাবে মারধর করা হয়েছে। হামলার নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট। হামলার সঙ্গে জড়িত ৭-৮ জনকে আমার শনাক্ত করেছি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'

হামলার কারণ জানতে চাইলে ওসি বলেন, 'ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে এই হামলা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা অন্যায় কিছু নয়। তার জন্য এমন অমানবিক হামলা উচিত নয়।'

সুইটের ফোন বন্ধ থাকায় তাকে ট্রেস করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সে যেখানেই থাকুক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান ওসি।

হামলার অভিযোগ বিষয়ে জানতে নৌকার বিজয়ী প্রার্থী ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

গতকাল অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৯৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন রিপন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বুবলী পেয়েছেন ৬৩ হাজার ৫২৬ ভোট।

স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনে মোশারফ হোসেন সুইট রিপনের পক্ষে এবং জাহাঙ্গীর কবীর বুবলীর পক্ষে কাজ করেছেন।

Comments