‘ইসি কর্মকর্তাদের বলেছি, দরকার হলে বার বার নির্বাচন বন্ধ করবেন’

সাবেক সিইসি আব্দুর রউফের পরামর্শ
ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সাবেক ৩ সিইসি। ছবি: সংগৃহীত

এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের কারণে গাইবান্ধা উপনির্বাচন মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আব্দুর রউফ বলেছেন, ইসি কর্মকর্তারা নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা বলেছি, দরকার হলে বার বার নির্বাচন বন্ধ করবেন। জাতিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করবেন।

নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাবেক সহকর্মীদের মতামত, পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা জানতে আজ বুধবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

এসময় সভায় সাবেক সিইসি আব্দুর রউফ, কে এম নূরুল হুদা, কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, মো. শাহনেওয়াজ অংশ নেন। এ ছাড়া, সাবেক ইসি সচিব মোহাম্মাদ সাদিক, মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দীন আহমেদ, এমএন রেজা এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমানও ছিলেন।

সাবেক সিইসি আব্দুর রউফ বলেন, 'যখন ভোটাররা ভোট দিতে পারেন না। একজনের ভোট আরেকজন দেয়, তখন নির্বাচন কমিশন বসে থাকবে কেন? স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের এই অধিকার (নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার) আছে। তাদের চোখের সামনে ধরা পড়েছে, ভোট দিতে পারছে না, কারচুপি হচ্ছে। তারা নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে।'

মাগুরার নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনায় কেন ব্যবস্থা নিতে পারেননি? সভা শেষে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই। পেছনের ঘটনা টেনে এনে জাতিকে আর অন্ধকারে ফেলবেন না।'

ইভিএম প্রশ্নে আব্দুর রউফ বলেন, 'কমিশন চেষ্টা করতে থাকুক। মানুষ যদি শিক্ষিত হয়, তাহলে হবে।'

'জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিভিন্ন অফিসে থাকতে পারে। এতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেহেতু এর প্যারেন্ট, মুলটা তারাই ইনিশিয়েট করবে। এটা তাদের কাছে না থাকলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যদি দেখেন এনআইডিতে একটা ভোটার লিস্টে অন্যটা, তখন আরেকটা গণ্ডগোল লাগবে। আমার কথা হলো- বেইজটা ইসির হাতে থাকবে। অন্যদের লাগলে সেটা নেবে', বলেন তিনি।

সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বডি। সংবিধান ও আইন মোতাবেক তারা কাজ করে যাবে, আমরা এই পরামর্শ দিয়েছি।'

ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ইভিএম নিয়ে প্রচার-প্রচারণা করতে হবে। এর সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। তারা (ইসি) বলেছেন নতুন ইভিএম খুবই উন্নতমানের। অলমোস্ট ডিজিটাল। কিন্তু এটা তো লোকজনকে জানতে হবে। এটা নিয়ে ইতিবাচক প্রচারণার দরকার আছে।'

এনআইডি প্রসঙ্গে কাজী রকিব উদ্দিন বলেন, 'ভোটার তালিকা থেকেই এনআইডি এসেছে। এনআইডি ইসির কাছে না থাকলে লোকজন ভোটার হতে চাইবে না। মানুষের ভোটার হওয়ার ততটা আগ্রহ নেই। এখন এনআইডির জন্যই আগ্রহ বেশি। এই অ্যাডভান্টেজটা এখান থেকে সরানো উচিত নয়। এতে গণ্ডগোল হতে পারে। এটা এখানে থাকা উচিত। এখানে কোনো দুর্বলতা থাকলে সেটিকে সঠিক করতে হবে। ইসির অনেক বড় ডেটাবেজ আছে এবং সেটা সুরক্ষিত আছে। এটা ভালো সিস্টেম হয়ে আছে। একে আরও মজবুত করা উচিত।'

সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, 'আমাদের সময় যেভাবে রিপোর্ট আসতো, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। এই কমিশন সিসিটিভিতে পর্যবেক্ষণ করেছে। তার আলোকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

গাইবান্ধা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন যে ব্যবস্থা নিয়েছে ঠিকই নিয়েছে। বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার এই ক্ষমতা আছে। তারা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে নতুনভাবে আর তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করার দরকার নেই।'

কে এম নূরুল হুদা বলেন, 'এনআইডি নির্বাচন কমিশনের তৈরি একটি জিনিস। এটা নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকলে সরকারের কোনো অসুবিধা হয় না। এনআইডির সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন, ভোটার তালিকার পুরোপুরি সম্পর্ক রয়েছে। এটাকে মাঝখান থেকে নিয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের কাজ করতে অসুবিধা হবে।'

'যেসব জায়গায় ইভিএমে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে ৬০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা কোনো প্রশ্ন তুলেননি। প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তারা কোনো আপত্তি করেননি। বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীরাও কোনো আপত্তি করেননি। যেখানে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে, সেখানকার ভোটাররা জানেন এটা কী? যারা ব্যবহার করেননি, তাদের পক্ষে ইভিএম বুঝাটা একটু কঠিন। আমি বলেছি- যতদূর পারা যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত', বলেন তিনি।

কে এম নূরুল হুদা বলেন, 'আমাদের এখানে ভোটের পরিবেশ ভালো থাকে না। কেন্দ্র দখল হয়। ভোট ডাকাতি হয়। এখানে ১০০ শতাংশ ভোট হয়। কাজেই এখানে ব্যালটে নির্বাচনের চেয়ে ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'মাঠ প্রশাসনে ভালো একটি সমন্বয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করতে হবে। তাদেরকে নির্বাচনী কাজে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

'Election Commission shamelessly favouring a particular party'

Hasnat Abdullah says police obstructed NCP leaders and activists from entering EC building

25m ago