ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনে ভোটের সমীকরণ
বিএনপির সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন সামনে রেখে সরগরম ২ উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গন।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় এই আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। বিএনপিও অংশ নিচ্ছে না। ফলে দলীয়ভাবে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টি মনোনীত ২ প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াইটা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
একই সঙ্গে তাদের মন্তব্য, লড়াইটা আসলে হতে যাচ্ছে ২ উপজেলার মধ্যে। প্রার্থীদের মধ্যে ৩ জনের বাড়ি আশুগঞ্জে ও ৫ জনের সরাইলে। ২ উপজেলার মানুষই চাচ্ছেন, তাদের উপজেলা থেকেই এমপি নির্বাচিত হোক।
জাতীয় সংসদের এই ২৪৪ নম্বর আসনটি গঠিত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে। উপনির্বাচনে অংশ নিতে গত ৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ১৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়ে।
এরমধ্যে গত শনিবার স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মোহন মৈশান মারা যান। রোববার যাচাই-বাছাইয়ের পর আরও ৪ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়। শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে আছেন ৮ প্রার্থী।
তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির মনোনীত ২ প্রার্থী হলেন আব্দুল হামিদ ভাসানী ও জহিরুল ইসলাম জুয়েল। বাকি ৬ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা, বিএনপির দলত্যাগী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, মাহবুবুল বারী চৌধুরী, মঈন উদ্দিন মঈন, শাহজাহান আলম সাজু ও আবু আসিফ আহমেদ।
এই ২ উপজেলার কয়েকটি দলের স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনে দলীয় ব্যানারে যে ২ প্রার্থী নির্বাচন করছেন তারা কেউই সেই অর্থে শক্তিশালী প্রার্থী নন। লড়াইটা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই হবে।
প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন। তিনি গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে তিনি ৮ হাজার ৫৭৮ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার কাছে হেরে যান।
দীর্ঘ ৫০ বছরে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মঈন আগের নির্বাচনে যে সংখ্যক ভোট পেয়েছেন, তাতে তার নিজস্ব অবস্থান তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাদের ভাষ্য, এ কারণে অন্য যেকোনো প্রার্থীর তুলনায় মঈন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে আছেন বলে ধারণা করা যায়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, এ আসনের অধীনে সরাইল উপজেলার ৯ ও আশুগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়ন আছে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার ২৪০ জন। সরাইলে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯ জন, যা আশুগঞ্জের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
প্রার্থীদের মধ্যে সরাইলের বাসিন্দা সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউল হক মৃধা ও জেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু আলোচনায় আছেন।
অন্যদিকে আশুগঞ্জ উপজেলায় মঈন উদ্দিন মঈন ছাড়াও আলোচনায় আছেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন।
উপনির্বাচন প্রসঙ্গে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৮ সালের নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন মঈন উদ্দিন মঈন। তিনি যেহেতু যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন এবং আওয়ামী লীগ এবার আসনটি উন্মুক্ত রেখেছে, সেজন্য আমরা এবার তার পক্ষে কাজ করবো।'
'আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে আশুগঞ্জ উপজেলায় দলীয় সভা করে তার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেবো,' যোগ করেন তিনি।
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেনের মতে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দলত্যাগী নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া এবার তেমন ভালো করতে পারবে না।
তিনি মনে করেন, জাতীয় পার্টি যে নতুন মুখকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে তারও এলাকায় তেমন পরিচিতি নেই। সরাইল থেকে যে ২ আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের এবার সুযোগ কাজে লাগানোর সময় এসেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবহেলিত এই জনপদকে এগিয়ে নিতে জনগণের চাপে বিগত নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম। সেই নির্বাচনে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও দলীয় কিছু লোকের বিরোধিতার কারণে চূড়ান্ত বিজয় পাইনি। এবার যেহেতু আসনটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, সেজন্য এবারও এলাকার মানুষের চাপে প্রার্থী হয়েছি। জনগণ আগেও আমার সঙ্গে ছিল, এবারও থাকবে।'
আরেক প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজুর ভাষ্য, 'দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে জনগণের পাশে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। এসব দিক বিবেচনায় জনগণ আমাকে বিমুখ করবে না।'
স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাদের বিশ্বাস ও ভালোবাসা নিয়ে আগামী উপনির্বাচনে আমি জয়লাভ করতে পারব।'
দলত্যাগী বিএনপি নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
Comments