সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন কঠিন: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, 'সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন কঠিন।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো এবং একইসঙ্গে সরকারের যে প্রতিষ্ঠান—যেমন প্রশাসন, পুলিশ; তারা যদি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা না করে সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের যে দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়তে পারে।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এই কথা বলেন।

এর আগে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

মতবিনিময় সভার আলোকে হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'এটা একটা গ্রাউন্ড রিয়ালিটি যে, সরকারের যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এককভাবে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন। আমরা স্বীকার করেছি এবং আমরাও কথাটা জোর দিয়ে বলেছি যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেহেতু সরকার বিদ্যমান থাকবে, তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছাটা অবশ্যই প্রয়োজন হবে।'

'আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশন এককভাবে কখনোই একটি অবাধ-নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে না যদি সংশ্লিষ্ট সবাই; প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো এবং একইসঙ্গে সরকারের যে প্রতিষ্ঠান—যেমন প্রশাসন, পুলিশ, তারা যদি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা না করে সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের যে দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়তে পারে,' বলেন তিনি।

ইভিএম প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'ইভিএমের ব্যাপারে উনারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হচ্ছে না। আমরা বলেছি, আমরাও খুশি। ওনারা আবারও বলতে চাচ্ছিলেন ইভিএমে অনেক কিছু আছে, ফাঁকি-ঝুকি ইত্যাদি আছে। আমরা সেটা মেনে নেইনি। আমরা একটা ইয়েতে বলেছিলাম, যাক তাহলে তো ২০১৮ সালের নির্বাচনে আলহামদুলিল্লাহ কোনো রকম অনিয়ম হয়নি! কারণ সেটা ইভিএমে হয়নি, সেটা ব্যালটে হয়েছিল। এটা আমরাও বিশ্বাস করি, ব্যালটে নির্বাচন হলে কোনো রকম অনিয়ম হবে না। যেমন ১৮ সালেও হয়নি, আগামীতেও ইনশাল্লাহ হবে না।'

হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'ওনারা বিভিন্ন বাস্তব চিত্রের কথা বলেছেন। আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতি, ফিল্ড লেভেলে যে ফ্যাকটরগুলো ওয়ার্ক করে সেই সময় সেগুলো কথা ওনারা বলেছেন। পুলিশের ভূমিকার কথাও বলেছেন। আমাদের স্পষ্টভাবে বলেছেন, "পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে", কারণ সরকারের নির্দেশে পুলিশ এটা করে না—স্থানীয়ভাবে যে নির্বাচনগুলো হয়, সেখানে কিন্তু পুলিশকে পক্ষাশ্রিত করার জন্য প্রার্থীরাই চেষ্টা করে থাকেন। সেখানে কীভাবে পুলিশকে নিউট্রিলাইজড করা যায় সে জন্য ওনারা আমাদের সহায়তা চেয়েছেন। আমরা বলেছি আমরা চেষ্টা করব এবং সরকারের সদিচ্ছার ওপর আমরা বারবার জোর দেবো, সেটা সরকারকেও করতে হবে, আমরা জিনিসটা ভেবে-চিন্তে পরে দেখব।'

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'সরকারের সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত যেসব নির্বাচন আমরা আসার পরে করেছি, আমরা সরকারের তরফ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ আজ অব্দি পাইনি। এখন দৃষ্টি জাতীয় নির্বাচনের দিকে। সেখানে যদি পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকাটা আমরা এখন পর্যন্ত পেয়েছি, এ ধরনের যদি নিউট্রাল অবস্থানে ওনারা থাকেন তাহলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচনটা অনেক ভালোভাবে করা সম্ভব হবে কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে আমরা তো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না!'

'আমাদের তরফ থেকে চেষ্টা থাকবে, সরকারের ওপর আমাদের তরফ থেকে যে চাপটা থাকবে, যদি সরকার...নির্বাচনটা যদি প্রভাবিত হয়ে যায় ব্যাপকভাবে এবং সেই তথ্য যদি আমাদের কাছে এসে পড়ে মিডিয়ার মাধ্যমে—পারসোনাল ফেসবুকে নয়, জাতীয় যে প্রিন্ট মিডিয়াগুলো আছে, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করব এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কথা বলছি, সবগুলো টিভি চ্যানেল দেখব। আমরা কিন্তু এগুলো মাধ্যমে...একটা ঐক্যমত তো হয়েছি যে, নেগেটিভ যে আচরণ, আমরা ওর ওপর ভিত্তি করে কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। এটা আমরা আশ্বস্ত করতে পারি,' যোগ করেন তিনি।

নির্বাচনী আইন প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি সেদিনও সভায় বলেছি, মিডিয়াকর্মী যারা যাবেন তাদের কোনো রকম বাধা দেবেন না। তাদের ভেতরে যাওয়ার অধিকার আছে এবং স্বচ্ছতার বিষয়ে তথ্য আমরা কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে পাব না, স্বচ্ছতার বিষয়ে তথ্য আমরা মিডিয়ার কাছ থেকে পাব। আমি স্পষ্ট করে এই কথা গাজীপুরে বলেছি, পুলিশ-প্রশাসনের উদ্দেশে বলেছি। স্বচ্ছতার সার্টিফিকেট আমি পুলিশ থেকে নেব না, প্রশাসন থেকে নেব না—মিডিয়া থেকে নেব।'

'আমাদের সহযোগিতা থাকবে, এটা নিয়ে কিছু মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। পরে আরও ব্যাখ্যা করা হবে। আমরা এটাকে চূড়ান্ত বলিনি। ওটার ব্যাপারে প্রয়োজনে আলোচনা আমরা পরে করব। আমরা মিডিয়ার ভূমিকা খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকি,' বলেন তিনি।

সিটি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'অসংখ্য আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে। আমি বলেছি যে, সব কিছুই আমলে নেওয়ার মতো হয় না। কারণ আমি রোম বাছতে গিয়ে যদি কম্বল উজার করে ফেলি সেটা খুব বাস্তব...আমি বলেছি, অ্যাট এন্ড অব দ্য ডে, মানুষ যেটা জানতে চাইবে নির্বাচনটা কেমন হলো। ১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কয়টা আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে, কে কে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন আজও করে না, তখনো করেনি।'

তিনি বলেন, 'নির্বাচনের দিনটা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে পোলিং-ভোটিং প্রসেস আমরা যদি দেখতে পাই, আমরা বলেছি আমরা চাই, প্রসেসটা শুধু ভালো হবে না-শ্যাল বি সিন টু হ্যাভবিন ডান, যেটা আমরা বলি ফিজিবল। দৃশ্যমাণ হতে হবে নির্বাচনটা ভালো হয়েছে। যদি দৃশ্যমান না হয় তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।'

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'আমরা আশাবাদী সরকারের সদিচ্ছা থাকবে। জাপা মহাসচিবকে বলেছি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আপনাদের করতে হবে। আপনারা যদি ভালোভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে কেন্দ্রে কেন্দ্রে যদি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলেও কিন্তু নির্বাচনের যে শুদ্ধতা বিঘ্নিত হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

How the US has shifted military jets and ships in the Middle East

As America’s national security leaders discuss the next steps, the Pentagon has moved to ensure that its troops and bases in the region are protected.

38m ago