আ. লীগের শোডাউনে আটকা পড়ে মনোনয়ন জমা না দিতে পারার অভিযোগ

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের শোডাউনের (বামে) কারণে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান গনি (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ছিল আজ বৃহস্পতিবার। কিন্তু, আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের শোডাউনের কারণে আটকা পড়ে শেষ মুহূর্তে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি চট্টগ্রামের অন্তত ৪ প্রার্থী।

তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোয়নপত্র জমা দিতে এসে মিছিল ও শোডাউনের কারণে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি। 

সময়ের আগে এলেও শোডাউনে আটকা পড়ে বিকেল ৪টা পার হয়ে যাওয়ায় তাদের মনোনয়নপত্র জমা নেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্ধারিত সময়ের আগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছালেও, মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি চট্টগ্রাম-৯ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান গনি, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের রাশেদুল আমিন, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মিঠুন দাশ এবং চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে একই দলের বাসুদেব কুমার রায়। মিঠুন ও বাসু দুজন দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ১০টি আসনে এবং চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম ৬টি আসনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সকাল থেকেই বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলবল নিয়ে শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে। 

শেষ দিনে মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু, চট্টগ্রাম-১২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ, আরশাদুল আলম বাচ্চু এবং বন্দর-পতেঙ্গা ১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ।

সবচেয়ে বেশি আলোচিত শোডাউন করেছেন নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফ। বিকেল ৩টার দিকে তিনি প্রায় ২০০ লোক নিয়ে মনোয়নপত্র জমা দিতে যান। এ সময় আধাঘণ্টা ধরে রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের বাইরে স্লোগান দেন সমর্থকরা। সাড়ে ৩টার কিছু আগে মনোনয়ন জমা দেন লতিফ।

জাতীয় সংসদের নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ৮ (খ) ধারায় বলা আছে, মনোয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো ধরনের মিছিল কিংবা শোডাউন করতে পারবে না।

এদিকে, সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান গনি। বিকেল ৪টার পর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাকে। 

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা অনেক আগে এসেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিছিলের কারণে ভেতরে ঢুকতে পারিনি। আমাদের দেরি হয়ে যায়। আগে এলেও এখন আমাদের মনোনয়ন জমা নিচ্ছেন না কর্মকর্তারা।'

এনপিপির প্রার্থী বাসুদেব কুমার রায় সাংবাদিকদের বলেন, 'এত এত পরিমাণ শোডাউন, তাদের গুঁতোগুঁতিতে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারিনি। আমরা এসেছি ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে। এসে দেখি গেট বন্ধ। অন্য দিক দিয়ে এসে জমা দিতে গেলে বলছে, আর জমা হবে না।'

'তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে,' প্রশ্ন রাখেন তিনি।

আরেক প্রার্থী রাশেদুল আমিনের মনোনয়ন জমা দিতে আসা লোকজনও একই অভিযোগ জানান।

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার ৮ (ক) ধারায় বলা আছে, কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধা দেওয়া নিষেধ। কোনো প্রার্থী ও প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট জমা দেওয়ার সময় অন্য কোনো প্রার্থী বা কোনো ব্যক্তি কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না।

আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে এম এ লতিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার কোনো শোডাউন নেই। আমি সাধারণ মানুষ। আমি কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ করিনি। আমি তো মিছিলও করিনি। আমাকে যারা ভালোবাসেন তারা এখানে এসেছেন, তাদের কাউকে আমি আনিনি।'

জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আচরণবিধি দেখার জন্য আমাদের নির্বাচনী অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ কমিটি আছে। আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে নিয়োজিত আছেন। বিষয়গুলো নজরে এলে, সেটা মিডিয়ার মাধ্যমে হোক বা অন্য মাধ্যমে হোক আমরা ব্যবস্থা নেব।'

সূত্র জানায়, শেষদিনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ভবনে ১৬টি আসনের বিপরীতে ১১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

6h ago