‘বেকার, জনতা, নাগরিক’

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মোট ১৪৭টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দলের নাম বেশ অস্বাভাবিক।

জমা দেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, এ বছরের তালিকায় এমন সব নাম রয়েছে যেগুলো বেশ অদ্ভুত এবং অনেকগুলো দলের নাম ব্যাখ্যা করা কঠিন।

আবেদনকারীদের মধ্যে বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি, নাকফুল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সলিউশন পার্টি, বাংলাদেশ বেস্ট পলিটিকাল পার্টি, বাংলাদেশ সংগ্রামী ভোটার পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ-বাবেস এর মতো নামের দলও রয়েছে।

তালিকাটি তৈরির সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেন, 'এই নামগুলোর মধ্যে কিছু তো এত অদ্ভুত ও বিভ্রান্তিকর যে আমরা সেগুলোর অর্থ বুঝতেও হিমশিম খাচ্ছি।'

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন 'বাংলাদেশ পাক পাঞ্জাতন পার্টি'র নাম।

এর বাইরে বেশ কয়েকটি কম পরিচিত রাজনৈতিক দলও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি, নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ গ্রিন পার্টি, বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাকশন পার্টি, বাংলাদেশ শান্তির দল, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন, জাতীয় ভূমিহীন পার্টি, ফরোয়ার্ড পার্টি।

দুই ধাপে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে তিনটির নামের সঙ্গে 'বেকার' শব্দটি রয়েছে—বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ বেকার সমাজ ও বাংলাদেশ বেকার সমাজ-বাবেস।

গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে 'ছাত্র-জনতা' শব্দটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে, শুধুমাত্র একটি দল তাদের নামে 'ছাত্র' ব্যবহার করেছে—বাংলাদেশ ছাত্র-জনতা পার্টি।

'জনতা' শব্দটি এসেছে ১৭টি দলের নামে। সেগুলো হলো—জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ জনতা পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা পার্টি, বাংলাদেশের জনতা পার্টি (জেপিবি), জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র-জনতা পার্টি, মুসলিম জনতা পার্টি, জনতা কংগ্রেস পার্টি, বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি, জনতার কথা বলে, স্বাধীন জনতা পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ জনতার ঐক্য, সাধারণ জনতা পার্টি এবং বাংলাদেশের জনতার পার্টি।

ছয়টি দল তাদের নামে 'নাগরিক' শব্দটি ব্যবহার করেছে—জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ নাগরিক কমান্ড, বাংলাদেশ নাগরিক দল, বাংলাদেশ নাগরিক আন্দোলন পার্টি এবং গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি-ডিসিপি।

আবেদনকারীদের মধ্যে আরও রয়েছে নিউক্লিয়াস পার্টি, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ একাত্তর পার্টি, বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক প্রজন্ম এবং বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পার্টি।

সোমবার দুটি ধাপে আবেদনকারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

১০ মার্চ নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করে কমিশন। আবেদনের শেষ তারিখ ২০ এপ্রিলের মধ্যে ৬৫টি দল আবেদনপত্র জমা দিয়েছে।

১৯৭২ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের অধীনে ২০০৮ সাল থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দিচ্ছে কমিশন।

নিবন্ধন পেতে একটি দলকে তিনটি মানদণ্ডের মধ্যে অন্তত একটি পূরণ করতে হয়। সেগুলো হলো—যেকোনো সংসদীয় নির্বাচনে তার নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে অন্তত একটি আসনে জয় পাওয়া; জাতীয় নির্বাচনে একটি নির্বাচনী এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোটের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ পাওয়া; অথবা একটি কার্যকর কেন্দ্রীয় কার্যালয়, একটি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ জেলা বা ১০০টি উপজেলা/মহানগর এলাকায় অফিস থাকা এবং প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার সদস্য থাকা।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ৯৩টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর নির্বাচন কমিশন গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টিসহ ১২টি দলের জন্য মাঠযাচাই করে।

এই ১২টির মধ্যে বেশ কয়েকটির আপত্তি নিষ্পত্তির পর মাত্র দুটি দল নিবন্ধন পায়। সেগুলো হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।

Comments

The Daily Star  | English

Stop destroying nature, plant trees instead of cutting: Yunus

Protecting the environment should be a citizen-led movement, he says

1h ago