ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে ইসি: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা গতকাল একটা ঘোষণা দিয়েছেন। উনি বলেছেন যে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে রমজানের আগে ইলেকশন করার জন্য আমাদেরকে চিঠি দেবেন।আশা করছি আমরা দ্রুত চিঠিটা পেয়ে যাব।'
সিইসি জানান, 'আমরা অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি হবে না।'
সিইসি জানান, 'আমরা ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ করছি। বিশেষ করে, যারা ডিসেম্বরের মধ্যে ১৮ বছর পূর্ণ করবে, তাদের নতুন ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে আইন সংশোধন করা হয়েছে। ভোটার রেজিস্ট্রেশন, প্রশিক্ষণ, প্রকিউরমেন্ট ইত্যাদি কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চাই।'
নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি এবং তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতিও চলছে। তফসিল ডিসেম্বরের শুরুর দিকে হতে পারে। রোডম্যাপ ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হবে। আমরা একমাসের পরিকল্পনায় রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, মিডিয়াসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করব। মিডিয়ার অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, মিডিয়া আমাদের সঙ্গে থেকে নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ করতে ভূমিকা রাখুক। আপনারাও আমাদের বড় স্টেকহোল্ডার।'
সাংবাদিক নীতিমালা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, 'সাংবাদিকদের কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমরা সাংবাদিকদের সহযোগী হিসেবে দেখি, শত্রু হিসেবে না। আপনাদের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে নীতিমালা সংশোধনের চিন্তাভাবনা করছি। ইলেকশন কমিশনের সাথে শুধু নীতিমালা নিয়ে নয়, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েই আপনাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করব।'
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ সম্পর্কে সিইসি জানান, একটি খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। আপত্তি ও শুনানি শেষে নিরপেক্ষ এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে।
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, 'নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, স্ক্রুটিনি এবং আপত্তি গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।'
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে সিইসি জানান, 'আমাদের লক্ষ্য হলো একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। ডিসি, এসপি, প্রশাসন, পুলিশ, ডিজিএফআই, এনএসআই — সবাইকে বলেছি, দলীয় পক্ষপাত ছাড়াই নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। আগের মতো কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই, বরং এখন চাপ থাকবে পেশাদার ও নিরপেক্ষ কাজ করার।'
সিইসি বলেন, 'এখন এক নাম্বার চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। ভোটারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা হারিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর রাস্তা হারিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'আমাদের মূল লক্ষ্য একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। রাজনৈতিক দল, ভোটার— সবাই যেন নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারে। অতীতে অনেক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, এবারও চাই আরও বেশি জনগণের অংশগ্রহণ। এজন্য ম্যাসিভ অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন চালানো হবে।'
নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার প্রসঙ্গে সিইসি জানান, 'ভুয়া তথ্য, ভিডিও, মিথ্যা প্রচারণা— এসব বড় চ্যালেঞ্জ। আমার বিশ্বাস, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা কোননোসমস্যা সৃষ্টি করবে না আমার জন্য এখন বড় দুশ্চিন্তা হয়ে গেছে এআই মিসইউজ এবং এবিউজ। এটা রং ইনফরমেশন দিচ্ছে প্রতিদিন।'
গত তিন জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারদের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, 'আমরা এ বিষয়ে চিন্তা করছি। যারা পূর্বে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল, তারা যাতে নিরপেক্ষ থাকেন তা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। এখন কোনো ধরনের চাপ নেই, বরং যারা অনিয়ম করবেন তাদের জবাবদিহি করতে হবে— মানুষ, রাষ্ট্র ও আল্লাহর কাছে।'
আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, 'দল হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারবে না, তবে ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। সমর্থকরা ভোট দিতে পারবেন।'
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই সিইসির লক্ষ্য জানিয়ে সিইসি বলেন, 'আমাদের উদ্দেশ্য একটাই— একটি সুন্দর, বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ নির্বাচন। সবাইকে নিয়ে আমরা একটি সকলের নির্বাচন করতে চাই। জনগণের আস্থা ফেরানো, ভোটকেন্দ্রে ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ববোধ— সবকিছুর সমন্বয়ে আমরা কাজ করছি।'
Comments