ম্রো শিশুদের গল্প শোনাতে জুমঘরে পাঠাগার

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের বুকে প্রায় ১৩ শ ফুট উচ্চতায় ছিল একটি জুমঘর। স্থানীয় যুবক ইয়াঙান ম্রো সেটিকে গড়ে তুলেছেন পাঠাগার হিসেবে। নাম দিয়েছেন ‘সাংচিয়া তেকরা, সাংচিয়া শোনতারা কিম', বাংলায় যার অর্থ ‘গল্প বলা, গল্প শোনা’।
ছবি: মংসিং হাই মারমা/স্টার

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের বুকে প্রায় ১৩ শ ফুট উচ্চতায় ছিল একটি জুমঘর। স্থানীয় যুবক ইয়াঙান ম্রো সেটিকে গড়ে তুলেছেন পাঠাগার হিসেবে। নাম দিয়েছেন 'সাংচিয়া তেকরা, সাংচিয়া শোনতারা কিম', বাংলায় যার অর্থ 'গল্প বলা, গল্প শোনা'।

বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে রামরি পাড়ায় পাঠাগারটির অবস্থান।

ম্রো ভাষায় ইয়াঙান ম্রোর লেখা পৌরাণিক গল্প, রূপকথা, পাহাড়ের বুকে জীবন-জীবিকার গল্প ও নানা ধরনের কবিতার বই নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পাঠাগারটি।

পাঠাগার সম্পর্কে জানতে চাইলেই ইয়াঙান ম্রো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে ঘরটিকে পাঠাগার করা হয়েছে সেটি ছিল জুমঘর। সেখানে আমার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে জুমচাষ করে আসছিল। আমার বাবা-মা এ ঘরে বসে ম্রোদের বিভিন্ন রূপকথার কাহিনি ও গল্প শোনাতেন। তারা দুজনই এখন প্রয়াত। ঘরটিকে পাঠাগার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বলে গেছেন তারা। তাই বাবা-মায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং ছেলেমেয়েদের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে পাঠাগারটি গড়ে তোলা। এখনকার ছেলে-মেয়েরা ম্রো সমাজের গল্প থেকে বঞ্চিত। স্কুল বন্ধের দিনে শিশু শিক্ষার্থীদের এসব কাহিনি ও রূপকথার গল্প শোনানো হবে এখানে। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে স্কুলের পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'

ছবি: মংসিং হাই মারমা/স্টার

'চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে বাইট্যা পাড়ায় আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন এই পাহাড়ে যোগাযোগের কোন সুব্যবস্থা ছিল না। ছিল না কোন বিদ্যালয় এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হলেও পাহাড়ের মানুষের শিক্ষা এবং চিকিৎসা সেবা আগের মতোই রয়ে গেছে। এ সব কারণে সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে আমার এই পাঠাগার যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।'

ইয়াঙান ম্রো ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচ্যভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোতর ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর ২০১৪ সাল থেকে বিলুপ্তপ্রায় 'রিমিটচ্য' ভাষার ওপর গবেষণার পাশাপাশি নিজের মাতৃভাষায় লেখা ১৯টি ও বাংলা ভাষায় লেখা ১০টি মিলিয়ে মোট ২৯টি বই লিখে প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে ম্রো ভাষায় রূপকথার গল্প, ম্রোদের লোককাহিনি, ক্রামা ধর্ম ও ম্রো ভাষার ব্যাকরণ, ম্রো ভাষার অভিধান ইত্যাদি অন্যতম। 

'সাংচিয়া তেকরা, সাংচিয়া শোনতারা কিম' পাঠাগার প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে জানতে চাইলে রুমা উপজেলার রুইফো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মেনচং ম্রো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চিম্বুক পাহাড়ে অনেক ম্রো পাড়া থাকলেও আগে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কেউ ছিল না। এই পাঠাগারে এসে বই পড়ার মাধ্যমে শিশুরা ভালো কিছু শিখতে পারবে।'

এ ছাড়া চিম্বুক পাহাড়ে শিক্ষা এবং সুবিধাবঞ্চিত ম্রো শিশুরা লেখাপড়া শিখতে আরও উৎসাহিত হবে এবং আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলেয়ে জীবন গড়ে তুলতে সাহায্য করবে বলে আশা করেন তিনি।

 

Comments