‘প্লাস্টিক দূষণ রোধকল্পে টেকসই-সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য’

মানব ও প্রকৃতি রক্ষার জন্য প্লাস্টিক কর্তৃক মাটি, পানি ও বায়ুতে বিষাক্ত পদার্থ নির্গত হওয়ার কারণে সৃষ্ট অপূরণীয় দূষণ রোধ করতে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি (ইউজিসি) কমিশনের সদস্য ও এসসিআইপি প্লাস্টিকস প্রজেক্টের সায়েন্টিফিক এক্সপার্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
সভায় অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

মানব ও প্রকৃতি রক্ষার জন্য প্লাস্টিক কর্তৃক মাটি, পানি ও বায়ুতে বিষাক্ত পদার্থ নির্গত হওয়ার কারণে সৃষ্ট অপূরণীয় দূষণ রোধ করতে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি (ইউজিসি) কমিশনের সদস্য ও এসসিআইপি প্লাস্টিকস প্রজেক্টের সায়েন্টিফিক এক্সপার্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর।

তার মতে, প্লাস্টিক দূষণ রোধকল্পে টেকসই ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

'এসসিআইপি প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। গবেষণালব্ধ জ্ঞান থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক পথ বের হয়ে আসবে এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদেও পরিণত করা যাবে', বলেন তিনি।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) 'সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাসটেইনেবল ক্যাপাবিলিটি বিল্ডিং টু রিডিউস ইররিভারসিবল পলিউশন বাই প্লাস্টিক (এসসিআইপি)' শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের এক সভার তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা তাদের বক্তব্যে প্লাস্টিক দূষণ রোধকল্পে এ প্রকল্পটি কার্যকারী ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. সাইফুল ইসলাম এবং স্বাগত বক্তব্য দেন কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ও এসসিআইপি প্লাস্টিকস প্রজেক্টের পরিচালক ড. মো. রাফিজুল ইসলাম।

ড. মো. রাফিজুল ইসলাম বলেন, 'পরিবেশ রক্ষার জন্য প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা সবার দায়িত্ব। প্লাস্টিক বর্জ্য নির্মূল করা পৃথিবীর জন্য অপরিহার্য।'

অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত থেকে এক্সপার্ট হিসেবে প্রজেক্টের বিভিন্ন বিষয়ে টেকনিক্যাল বক্তব্য প্রদান করেন স্কিপ প্লাস্টিক প্রজেক্টের লিডার ও জার্মানির বাহস ইউনিভার্সিটি বাউমারের প্রফেসর ড. ইঞ্জি. ইকার্ড ক্রাফট।

অনুষ্ঠানে প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রফেসর ড. মো. রাফিজুল ইসলাম প্রজেক্টের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সব বাস্তবায়নকারী সহযোগী সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো. রোকনুজ্জামান, এসসিআইপি প্লাস্টিকস প্রজেক্টের ওয়েস্ট ল্যাবের প্রধান ও কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. কাজী হামিদুল বারী, খুলনা সিটি করপোরেশনের সিপিও ও এসসিআইপি প্লাস্টিকস প্রজেক্টের ফোকাল পয়েন্ট আবির উল জব্বার, এসসিআইপি প্লাস্টিকস প্রজেক্টের সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর ও চুয়েটের প্রফেসর ড. ফারজানা রহমান জুথি, মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র শেখ আব্দুর রহমান, নিরালা জনকল্যাণ সমিতি খুলনার জেনারেল সেক্রেটারি শেখ আবেদ আলী।

গত ১ এপ্রিল থেকে এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং এর মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর শেষ হবে।

এই প্রকল্পের প্রধান বাস্তবায়নে রয়েছে জার্মানির বাহস ইউনিভার্সিটি বাউমার ও সার্বিক অর্থায়নে রয়েছে জার্মানির ফেডারেল মিনিস্ট্রি অব দ্য এনভায়রনমেন্ট, ন্যাচার কনজারভেশন নিউক্লিয়ার সেফটি ও কনজুমার প্রটেকশন। প্রকল্পের কার্যক্রম হিসেবে জার্মানির বাহস ইউনিভার্সিটি বাউমার, কুয়েট ও কেসিসির দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যে একটি অ্যাডভাইজরি কমিটি এবং বিভিন্ন মেয়াদে কুয়েট ও খুলনা সিটি করপোরেশন জনবল নিয়োগের জন্য বিভিন্ন ফিল্ডের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সিলেকশন বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে একটি নলেজ ট্রান্সফার হাব, ওয়েস্ট ল্যাব ও প্রজেক্ট অফিস স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। যার মাধ্যমে কুয়েট শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের গবেষকরা বিশেষ করে সিভিল গ্রাজুয়েটরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হবেন বলে জানানো হয়েছে। এই প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ফিল্ডে পিএইচডি ও এমএসসি (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

এ ছাড়া, খুলনা সিটি করপোরেশনে একটি জনসচেতনতা কেন্দ্র স্থাপন করার কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), কেসিসি ও মোংলা পৌরসভার মেয়রের কার্যালয় ও খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিরালা জনকল্যাণ সমিতি বাস্তবায়নের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।

এতে প্রাপ্তির সময় সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও কেসিসি থেকে লেটার অব ইনডেন্ট দেওয়াসহ সহযোগিতা করেছে। এ ছাড়া, এই প্রকল্পের সঙ্গে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) সক্রিয় সহযোগী হিসেবে রয়েছে। এর সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য ও কেসিসিকে পরিকল্পিত, পরিবেশ-বান্ধব ও বসবাসের উপযোগী করার লক্ষ্যে জার্মানির বাহস ইউনিভার্সিটি ও কুয়েটের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ইতোমধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ২ জন ব্যক্তিকে ফোকাল পয়েন্ট ও সহকারী ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করেছেন। কুয়েট ও কেসিসি যৌথভাবে কেসিসির ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সেক্টরকে উন্নত করার লক্ষ্যে জার্মানির বাহস ইউনিভার্সিটি ও কুয়েট একটি বোর্ড অব ডিরেক্টর গঠন করা হয়েছে, যা কুয়েট ও কেসিসির মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে।

Comments