সাঁওতালদের ৮৬.৩১ একর জমি দখলের অভিযোগ এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে

মানহানি মামলার হুমকি সংসদ সদস্যের
দিনাজপুর সাঁওতাল
ছবি: স্টার

দিনাজপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিক ও তার আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে এ অভিযোগ তুলে ধরেন নবাবগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

এসময় তারা সংসদ সদস্য ও তার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে জমি দখল অভিযোগের তদন্ত এবং দখল হয়ে যাওয়া জমি ফিরে পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী সাঁওতালরা অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তার চাচা জাতীয় পার্টি নেতা কুশদহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন নবাবগঞ্জে জমি দখলের চক্র চালাচ্ছেন। উপজেলার সাঁওতালদের ভূমি তাদের মূল লক্ষ্য।

তাদের আরও অভিযোগ, সংসদ সদস্য ও তার আত্মীয়রা এ পর্যন্ত অন্তত ৭ জনের মোট ৮৬ দশমিক ৩১ একর জমি দখল করে নিয়েছেন। এলাকায় আরও অনেক পরিবারের জমিও তারা জোরপূর্বক দখল করেছেন, কিন্তু ভয়ে তাদের কেউ মুখ খুলছে না।

গতকাল মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মৃত জটারাম হেমব্রমের ছেলে গণেশ হেমব্রম, মৃত পৃথ্বী হেমব্রমের ছেলে উকিল হেমব্রম, সুনা মার্ডির ছেলে রবেন মার্ডি, দুখান মার্ডির ছেলে সোলেমান মার্ডি, কবিরাজ হাসদার স্ত্রী খুকুমণি মার্ডি, বার্নাস হাসদার ছেলে লুইস হাসদা এবং উপজেলার খলিপপুর গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে আলতাব আলী।

তাদের সবার জমি সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তার আত্মীয়রা দখল করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

উকিল হেমব্রমের অভিযোগ, তার নিজের এবং আত্মীয়দের ২০ দশমিক ৫৬ একর জমি দখল করে নিয়েছেন সংসদ সদস্য ও তার আত্মীয়রা। নবাবগঞ্জের বিনোদন পার্ক স্বপ্নপুরীর ভেতর দখল করা ৩৩ শতক জমিতে একটি কবরস্থান ও ১৪ শতক জমিতে একটি কালী মন্দির আছে। ২ একর জমিতে একটি পুকুরও খনন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই অন্যায় সহ্য করে যাচ্ছিলাম, কিন্তু পরিস্থিতি এখন সহ্যের বাইরে।'

উকিল হেমব্রম জানান, জমি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সংসদ সদস্যের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা গণেশ হেমব্রম এবং তার ভাগ্নেকে হত্যার হুমকি দেন।

খুকুমণি হেমব্রমের অভিযোগ, সংসদ সদস্য ও তার চাচা দেলোয়ার হোসেন এবং তাদের পালিত সন্ত্রাসীরা খলিপপুর মৌজায় তার ২ দশমিক ৩২ একর জমি দখল করে নিয়েছেন।

লুইস হাসদার অভিযোগ, সংসদ সদস্যের প্রত্যক্ষ প্রভাবে তার ১ দশমিক ৬১ একর জমি দখল করে একটি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে।

এ ছাড়া, শিবলী সাদিক গং একই মৌজার দুটি ভিন্ন দাগে তাদের ২৮ দশমিক ৫৩ একর এবং ২১ দশমিক ৮ একর জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রবেন মার্ডি ও সোলেমান মার্ডি।

তারা আরও জানান, স্বপ্নপুরী পার্কের ভেতর তাদের প্রায় ১৫ একর জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক এই পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আলতাব হোসেনের অভিযোগ, সংসদ সদস্য ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা দুটি পৃথক স্থানে তার ১০ দশমিক ৭১ একর এবং ১ দশমিক ৫০ একর জমি দখল করে নিয়েছেন।

ইতোমধ্যে আলতাব হোসেনসহ জমি হারানো সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর কয়েকজন এ বিষয়ে থানায় মামলাও করেছেন।

জমি ফিরে পাওয়ার দাবিতে গত ৩০ জুলাই দিনাজপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর কয়েকজন। তবে সমস্যার সমাধান দূরের কথা, দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে বলে জানান তারা।

উকিল হেমব্রম বলেন, 'আমরা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এই সংসদ সদস্য এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছ থেকে ক্রমাগত হুমকি পাচ্ছি।'

এ বিষয়ে 'জাতীয় আদিবাসী পরিষদ' সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় এক সংসদ সদস্যের প্রভাবে নবাবগঞ্জ উপজেলায় জমি দখলের ঘটনা বেশি। অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাই।'

দিনাজপুর জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য রবিউল আওয়াল খোকা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাঁওতাল বা পিছিয়ে থাকা এসব  জনগোষ্ঠীর জমি দখল কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দিনাজপুরে সাঁওতালদের জমি দখলের ঘটনা দীর্ঘদিনের। এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং যার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তিনি রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কাজেই বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে না দেখে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।'

তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন তাদের একটি প্রতিশ্রুতি ছিল যে, সাঁওতালসহ অন্য সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করবে। কিন্তু গত ১৪ বছরেও তারা সেটি করেনি এবং এ বিষয়ে তাদের কারও মাথাব্যথা নেই বলেই মনে হচ্ছে। যে কারণে তাদের ভোগান্তিতে রয়েই গেছেন।'

জমি দখলের অভিযোগ বিষয়ে সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের জন্য দলেরই একটি অংশ ষড়যন্ত্র করছে।'

'কোনো জমি দখল করা হয়নি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ আনার জন্য মানহানি মামলা করবো।'

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

5h ago