ওএমএসে চাল বিক্রিতে ৬০ কোটি টাকার অনিয়ম

ফাইল ছবি: রাশেদ সুমন

২০২০ সালে করোনা মহামারিতে লকডাউনে যখন নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে, তখন খাদ্য অধিদপ্তর  সারা দেশে বিশেষ ও নিয়মিত ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) কার্যক্রমের আওতায় ভর্তুকি মূল্যে চাল বিক্রি করেছে।

তবে অনিয়মের অভিযোগে এমন ভালো উদ্যোগেও পড়েছে কলঙ্কের দাগ।

বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৭০ হাজার টন চাল বিতরণে ৬০ কোটি টাকার আর্থিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে।

সিএজি তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, খাদ্য অধিদপ্তর ওএমএস ডিলারদের কাছে ৫৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মূল্যে ৭০ হাজার ৩৫ টন চাল বিক্রি করেছেন। কিন্তু সরকারি কোষাগারে সেই টাকা জমা দেয়নি।

সিএজি এ সংক্রান্ত ট্রেজারি চালনের তথ্য সরবরাহ করতে বললেও খাদ্য অধিদপ্তর রাজকোষে অর্থ জমা দেওয়ার কোনো প্রমাণ সরবরাহ করতে পারেনি।

জুনে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা সিএজি অডিট রিপোর্টে এমনই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, '... এটি প্রমাণ করে যে এই অর্থ কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।'

ওএমএস ডিলারদের কাছে বিক্রি করা ৭০ হাজার ৩৫ টন  চালের মধ্যে ৬৮ হাজার ৩০০ টন বিশেষ ওএমএস প্রোগ্রামের অধীনে এবং ১ হাজার ৬৫৩ টন চাল নিয়মিত ওএমএস প্রোগ্রামের অধীনে বিক্রি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য অধিদপ্তর নিরীক্ষকদের জানিয়েছে, তাদের ফিল্ড অফিসারদের ট্রেজারি চালান ও ডিস্ট্রিবিউশন অর্ডার প্রস্তুত করা এবং যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রাসঙ্গিক সব রেকর্ড ঢাকা রেশনিং অফিসের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংরক্ষণ করেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, 'যেহেতু খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেকর্ড সংরক্ষণ করে না, তাই নথিগুলো সরবরাহ করা সম্ভব নয়। অতএব, অডিট আপত্তি যথাযথ ও যৌক্তিক নয়।'

এমনকি তারা অডিট আপত্তি বাদ দেওয়ার জন্য অনুরোধও করেছিলেন।

সিএজি বলছে, ওএমএস বিক্রয় থেকে অর্থ সময়মতো কোষাগারে জমা দেওয়া এবং ওএমএস নীতি অনুযায়ী এর রেকর্ড রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা করেনি।

ওএমএস নীতি ২০১৫ অনুযায়ী, সুপারভাইজারের সইসহ এই কর্মসূচির আওতায় চাল বিক্রির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যসহ একটি মাস্টার রোল রাখতে হবে।

তবে, খাদ্য অধিদপ্তর ১৯৮টি মাস্টার রোল তৈরি করতে পারেননি। সেখানে ৩টি অফিসের ৯৭৩ দশমিক ৬৫ টন চাল বিক্রির বিবরণ রয়েছে। অফিসগুলো হচ্ছে ঢাকা রেশনিং অফিসের প্রধান নিয়ন্ত্রক, সাভারের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক  এবং নারায়ণগঞ্জের খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস।

এর জবাবে খাদ্যের মহাপরিচালক জানান, তারা মাস্টার রোল সংগ্রহ করে নিরীক্ষককে এ বিষয়ে অবহিত করবেন। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সিএজি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিলেও কোনো উত্তর পায়নি।

সিএজি খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে কোষাগারে টাকা জমা দিতেও বলেছিল।

অন্যান্য অসঙ্গতি

ঢাকা বিভাগের বিশেষ ওএমএস প্রোগ্রামে আরও কিছু অসঙ্গতি ছিল।

এই বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত ২০ হাজার ২৬৬ টন চালের মধ্যে প্রায় ১ হাজার টন চাল নির্দিষ্ট গ্রুপের কাছে বিক্রি করা হয়নি। এগুলো বিক্রি করার কথা ছিল মূলত শহরের বস্তিবাসীদের কাছে।

এতে বলা হয়, খাদ্য অধিদপ্তর ৭৮ লাখ টাকার চাল বিক্রির কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

সিএজি দেখেছে, ঢাকা রেশনিং অফিসের প্রধান নিয়ন্ত্রক কোষাগারে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জমা দেননি, যা ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে দাবিহীন ছিল। ওএমএস ডিলারদের কাছ থেকে নিরাপত্তার অর্থ হিসেবে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল।

একই অফিস ডিলারদের কাছ থেকে সংগৃহীত ওএমএস নীতিতে নির্ধারিত অর্থের চেয়ে কম অর্থ সংগ্রহ করে।

নিয়ম অনুযায়ী, ডিলারশিপ পাওয়ার জন্য জামানত হিসেবে একজন ডিলারকে ২৫ হাজার টাকা (ফেরতযোগ্য) রেশনিং অফিসে জমা দিতে হয়। কিন্তু অফিসটি বেশ কয়েকবার প্রতিটি ডিলারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। এর ফলে সরকারের ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।

এ ছাড়া, গাজীপুরের শ্রীপুরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জামানত ছাড়াই ২ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়।

উভয় ক্ষেত্রেই খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিরীক্ষা কমিটিকে জানান, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সিএজিকে জানানো হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

7h ago