চুরির মামলা না নিয়ে ওসি বললেন ‘মামলা হতে গেলে ভ্যালু লাগে’

বোয়ালখালী থানা
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চুরির ঘটনা ঘটলেও মামলা নেননি বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক।

ওসির ভাষ্যমতে সরকারি অফিসের দুটো পুরোনো সিলিং ফ্যান, তিনটি লাইট এবং ওজন মাপার মেশিন চুরি 'সামান্য' বিষয়। আর সামান্য বিষয়ে মামলা নিতে চাননি ওসি। তাই অভিযোগ দেওয়ার দুই দিন পার হলেও থানায় মামলা হয়নি।

মামলা করতে গেলে শাকপুরা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইনচার্জ ডা. রাকেশ দেকে দীর্ঘক্ষণ থানায় বসিয়ে রেখে ঘটনার বিবরণ লিখিত আকারে থানায় জমা নেওয়া হয়।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পপনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর শাকপুরা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চুরির ঘটনা ঘটে। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে থেকে সরকারি দুইটি ফ্যান, তিনটি লাইট এবং ওজন মাপার জিনিস চুরি হয়। পরদিন সকালে কেন্দ্রে ফাইলপত্র ছড়ানো ছিটানো এবং চুরির ঘটনা জানতে পারেন কেন্দ্রের ইনচার্জ ডা. রাকেশ দে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি এবং তার এক সহকর্মীকে নিয়ে বোয়ালখালী থানায় যান লিখিত অভিযোগ নিয়ে। অভিযোগে সরকারি অফিসের চুরির যাওয়া মালামালের বিবরণ এবং এর মূল্য উল্লেখ করা হয়। সকাল ১১ টায় থানায় গেলেও ওসি বাইরে মিটিং এ আছে তাই মামলা লিপিবদ্ধ করতে সময় লাগবে জানিয়ে থানার ডিউটি অফিসার তাদের থানায় বসতে বলেন। এরপর সোয়া ১টার দিকে ওসি আব্দুর রাজ্জাক এলে তার কক্ষে ডেকে নেয়া হয় ডা. রাকেশকে।

থানা সূত্রে জানা গেছে. লিখিত অভিযোগ দেখে ঘটনাকে সামান্য বিষয় উল্লেখ করে তাদের চলে যেতে বলেন ওসি আব্দুর রাজ্জাক। একটা সরকারি অফিসের ফ্যানের দাম কত, সরকারি অফিসের সামান্য বিষয় নিয়ে থানায় মামলা করতে এলেন কেন এবং মামলা করলে আদালতে যেতে যেতে ভোগান্তির আর শেষ থাকবে না বলে ওসি তাদের দুই জনকে চলে যেতে বলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পপনা কর্মকর্তা ডা. প্রতীক সেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওসি বলেছেন ঘটনাটি ছোটখাটো বিষয় এইগুলো নিয়ে মামলা হয় নাকি। আমরা একটি অভিযোগ জমা দিয়ে এসেছি, রিসিভিং কপিতে শুধুমাত্র বোয়ালখালী থানার একটি সিল দেয়া আছে। মামলা বা জিডির কোনো নম্বর নেই।'

'সরকারি অফিসে জিনিস খোয়া গেছে তাই কিছু দাপ্তরিক বিষয় আছে। চুরির বিষয়টি জানাতে হলে মামলা বা জিডির নম্বর দিয়ে দাপ্তরিকভাবে লিখিত আকারে জানাতে হয়। লিপিবিদ্ধ না করায় এটা আমরা করতে পারিনি। তবে বিষয়টি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অফিসে জানানো হয়েছে, বলেন ডা. রাকেশ।

মামলা বা জিডি কোনোটিই হয়নি নিশ্চিত করে বোয়ালখালীর ওসি আব্দুর রাজ্জাক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুটো পুরানো ফ্যান, লাইট আর ওজন মাপার জিনিস চুরি হয়েছে, এগুলো সামান্য বিষয়। মামলা হতে গেলে ভ্যালু লাগে, গ্রাম আদালতে বিচার হতে গেলেও ভ্যালু লাগে, পাঁচ ছয় হাজার টাকার জিনিসের জন্য কি মামলার ভ্যালু দাঁড়ায়।'

সরকারি জিনিস চুরি এবং ঘটনাটি ফৌজদারী অপরাধ জানার পরও কেন দুই দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা বা জিডি নেয়া হলো না জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'বড় ঘটনা হলে আমরা সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করি। তারপরও আমি বিষয়টি দেখছি।'

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

4h ago