যারা করবেন তদারকি, তারাই নিলেন ‘উপহার’

বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে উৎপাদিত হ্যান্ডসেট উপহার হিসেবে গ্রহণ করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
ফাইল ফটো

বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে উৎপাদিত হ্যান্ডসেট উপহার হিসেবে গ্রহণ করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

কমিটির সদস্যরা আজ রোববার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া নোকিয়া ব্র্যান্ডের 'উন্নতমানের' এই হ্যান্ডসেটগুলো গ্রহণ করেন।

সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, আগের বৈঠকে কমিটির সদস্য নুরুল আমিন বলেছিলেন যে মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোবাইল ও ল্যাপটপ তৈরি করা হয়। তিনি এগুলোর ‍গুণগতমান সম্পর্কে জানতে চান। পরে ওই বৈঠকে কমিটির সদস্যদের মোবাইল হ্যান্ডসেট দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়। 

তখন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছিলেন, 'মো. নুরুল আমিন টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) উৎপাদিত ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন ন্যায্যমূল্যে কিনতে চান। হাইটেক পার্কে নকিয়া সেট উৎপাদিত হচ্ছে। ১৪ হাজার টাকা মূল্যের সেটটি খুবই ভালো ও সুন্দর।'

বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে উৎপাদিত নকিয়া সেটটি কিনে উপহার হিসেবে কমিটির সব সদস্যকে দেওয়া হবে এবং তারা তা গ্রহণ করলে তিনি বাধিত হবেন বলে উল্লেখ করেছিলেন প্রতিমন্ত্রী।

এরপর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, 'বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫টি মোবাইল কোম্পানি মোবাইল সেট উৎপাদন করে। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ দেশীয় গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা হয় এবং এ সেট রপ্তানিও করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ল্যাপটপ উৎপাদিত হচ্ছে।'

তিনি এ প্রসঙ্গে টেশিস স্থাপিত হওয়ার কারণ ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। 

পরে কমিটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে উৎপাদিত উন্নতমানের ১৪ হাজার টাকা মূল্যের নোকিয়া সেট কিনে কমিটির সব সদস্যদের উপহার হিসেবে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববারের বৈঠকে তাদের উপহার হিসেবে এই ফোন দেওয়া হয়।

তবে সংসদীয় কমিটির সদস্যদের উপহার হিসেবে এই মোবাইল ফোন গ্রহণের বিষয়টিকে 'স্বার্থের সংঘাত' হিসেবে দেখছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি স্বার্থের সংঘাতের একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে যে স্থায়ী কমিটি, তারা এর মাধ্যমে স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষমতার সঙ্গে আপস করল।'

'এখন এই প্রশ্নও উঠতে পারে যে কমিটির জন্য এ ধরনের খরচ কি ন্যায়সঙ্গত কি না? কেন একটি সরকারি সংস্থা সংসদ সদস্যদের জন্য ফোন সেট কিনে দিয়ে ওই অতিরিক্ত খরচের বোঝা জনগণের কাঁধে চাপাবে,' প্রশ্ন করেন তিনি।

'স্বার্থের সংঘাতের' বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, আগের বৈঠকে টেলিফোন শিল্প সংস্থার 'দোয়েল' ল্যাপটপ উৎপাদন প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার কারণ জানতে চান প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তির কথা বলেন। 

পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার তার সঙ্গে একমত পোষণ করে সচিবকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

আজ রোববার অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ওই কার্যবিবরণী অনুমোদন দেওয়া হয়। 

প্রতিমন্ত্রী পলক বলেছিলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোয়েল প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। সেই গর্বের জায়গাটি নষ্ট করা হলো, বিব্রত করা হলো। এর জন্য কে দায়ী তা সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার।'

এ বিষয়ে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, 'দোয়েলের প্রথম চালান থেকে শুরু করে প্রকল্পের সব ব্যর্থতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। টেশিসকে ডিজিটাল ডিভাইস কারখানা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি সার্ভে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার চেষ্টা চলছে।'

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) সাশ্রয়ী ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ দোয়েল তৈরি শুরু করে। জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দেশে তৈরি ল্যাপটপ সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে দোয়েলের উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু কিছু ল্যাপটপ তৈরির পর সেগুলোর মান নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। পরে প্রকল্পটি সফলতার মুখ দেখেনি।

Comments