এবার লামায় রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে ৩০০ কলাগাছ কাটার অভিযোগ

ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এখানকার ৩টি পাড়ার বাসিন্দাদের উদ্যোগে শিশুদের জন্য একটি স্কুলের নির্মাণকাজও বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

পাহড়ি ঝিরিতে 'বিষ ঢালা' ও 'জুমভূমি পোড়ানো'র পর এবার বান্দরবানের লামা উপজেলায় ৩০০ কলাগাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে লামা রাবার কোম্পানির লোকদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, গত শনিবার সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রেংয়েন ম্রো পাড়ার এক বাসিন্দার লাগানো কলাগাছগুলো কেটে ফেলে হয়।

এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর রেংয়েন পাড়ার বাসিন্দাদের একমাত্র পানির উৎস ঝিরির উজানে বিষ দেওয়া অভিযোগ ওঠে।

তারও আগে ২৬ এপ্রিল রাবার ও কাজু বাদামের চারা লাগানোর জন্য ৪০০ একর জায়গায় আগুন দিয়ে অন্তত সাড়ে ৩০০ একর বনভূমি পোড়ানো হয়।

আজ সোমবার সকালে রেংয়েন পাড়ার কারবারি (গ্রামপ্রধান) রেংয়েন ম্রো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শনিবার সকালে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ কোম্পানির ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক এসে তার পাড়ার বাসিন্দা রেং ইয়ুনের বাগানের প্রায় ৩০০ কলাগাছ কেটে ফেলে। গাছগুলো কাটার পর তারা দিনভর সেখানে অবস্থান করে।'

এ সময় কয়েকজনকে নিয়ে কোম্পানির লোকদের বাধা দিয়েও তাদের থামাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন রেংয়েন ম্রো।

এই গ্রামপ্রধান জানান, তার পাড়ায় মোট ১১টি ম্রো পরিবারের বসবাস। জঙ্গল থেকে বাঁশ ও কাঠ সংগ্রহ করে সেগুলো বাজারে বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। কেটে ফেলা কলাগাছগুলো লাগানো হয়েছিল চলতি বছরের মে-জুন মাসে। গাছগুলো বড় হলে কলা বিক্রি করে চলতে পারতেন তারা।

কলাগাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজার মো. আরিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের লোকজন কারও কলাগাছ কাটেনি। বরং গত বছর লাগানো আমাদের রাবার বাগানে দশ হাজার রাবার চারা কেটে দেওয়া হয়েছিল।'

এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তফা জাবেদ কায়সার জানান, কলাগাছ কেটে ফেলার বিষয়ে তিনি অবগত নন। এখন পর্যন্ত কেউ তার কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেননি।

এদিকে গত শনিবারেই ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এখানকার রেংয়েন ম্রো পাড়া, লাংমন ম্রো পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দাদের উদ্যোগে এলাকায় শিশুদের জন্য একটি স্কুলের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

এ বিষয়ে ইউএনও জাবেদ কায়সারের ভাষ্য, 'স্কুল নির্মাণ বিষয়ে একটি পক্ষ অভিযোগ দিয়েছিল। স্কুল করতে গেলে একটা জায়গা লাগবে। আর যেহেতু এই ৩ পাড়ার জায়াগা এখনও বিরোধপূর্ণ, তাই বিরোধ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্মাণকাজ করা যাবে না।'

এদিকে রাবার কোম্পানি ৩ পাড়ার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে জানিয়ে লামা সরই ভূমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য মথি ত্রিপুরা ডেইলি স্টারকে জানান, ইতোমধ্যে রাবার কোম্পানি তিন পাড়াবাসীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ৩টি মামলা করেছে।

মথি ত্রিপুরার অভিযোগ, লামা সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রেংয়েন ম্রো পাড়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লাংকম ম্রো পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া মিলে মোট ৪০০ একর জুমভূমি ও প্রাকৃতিক বন নিজেদের ইজারা নেওয়া জমি হিসেবে দাবি করে আসছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

13h ago