মা মর্গে, মেয়ে পরীক্ষার হলে

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের কালাই গোবিন্দপুরের বাসিন্দা দিনা বেগমের মরদেহ গতকাল শুক্রবার উদ্ধার করেছেন পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। দিনার মরদেহ বর্তমানে নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে। ভুক্তভোগী পরিবারে চলছে শোকের মাতম আর আহাজারি।

ওই নারীর বড় মেয়ে নাজিফা আক্তার এ বছর নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। এর মধ্যেই আজও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন নাজিফা। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সাটিরপাড়া কেকে ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে তিনি গণিত পরীক্ষায় অংশ নেন। এদিন ছিল এসএসসির লিখিত সর্বশেষ পরীক্ষা।

নরসিংদী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বলেন, 'খবরটি শুনে আমি পরীক্ষার কেন্দ্রে ছুটে গেছি, মানসিকভাবে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজকেই এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ। একটা পরীক্ষায় না বসলে তার চূড়ান্তে রেজাল্টে ফেল দেখাবে। তাই আজ পরীক্ষাটা তার জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।'

নাজিফার নানা কাজী ওমর ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার নাতনি অত্যন্ত মেধাবী। সবগুলো পরীক্ষা ভালো দিয়েছে। আজকেও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। এ পরিস্থিতিতে আমরা বুঝিয়ে তাকে পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছি। আমি নিজে কেন্দ্রে নিয়ে গেছি, আবার নিয়ে এসেছি।'

নাজিফা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার মাকে হত্যায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এর মধ্যেই পরীক্ষায় অংশ নেওয়াটা খুবই কঠিন ছিল। সবাই আমাকে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছেন।'

নিহত দিনার মা রিনা বেগম ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর আলোকবালী ইউনিয়নে। ১৮ বছর আগে নজরপুর ইউনিয়নের বুদিয়ামারা গ্রামের কালাইগোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে আরমান গাজীর সঙ্গে দিনার বিয়ে হয়। তাদের ২ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে। সন্তানদের মধ্যে নাজিফা সবার বড়। সম্প্রতি আরমান গাজী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আরমান ও দিনার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ওই রাতেই আরমান দিনাকে হত্যা করে পালিয়ে যান।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লোপা চৌধুরী বলেন, 'শুক্রবারে সাধারণত চিকিৎসকরা ছুটিতে থাকেন। গতকাল এক নারীর মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। আজকে ময়নাতদন্ত করা হবে।'

নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি পুকুর থেকে দিনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যার ঘটনাটি সম্ভবত রাতে ঘটেছে। দিনার স্বামীসহ তার পরিবারের সবাই বর্তমানে পলাতক। ভুক্তভোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আমরা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Why are onion prices rising abruptly?

Onion prices have been increasing over the past weeks, as farmers and traders release fewer stocks to local markets in the hope of better returns amid the government’s suspension of imports

59m ago