তিস্তা প্রকল্প সংবেদনশীল বলে চীনের কিছুটা অনীহা আছে: লি জিমিং

জিমিং
সিজিএস আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, 'তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু এ প্রকল্পটি সংবেদনশীল বলে কিছুটা অনীহাও কাজ করছে।'

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত 'ন্যাশনাল ইমেজ ও চায়না ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, 'বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়ার পর চীন সেটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছে।'

'কিন্তু আমি খোলাখুলি বলতে চাই যে চীন এই প্রকল্পের ব্যাপারে কিছুটা অনীহা দেখাচ্ছে। কারণ হিসেবে আমরা বুঝেছি যে প্রকল্পটি বেশ সেন্সিটিভ,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এছাড়াও, আমার হয়তো এটা বলা উচিত নয়, কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্ন যে বাংলাদেশ সরকার পরবর্তীতে… বাইরের কোনো চাপে তার অবস্থান পরিবর্তন করবে কি না, আমি নিশ্চিত নই।'

লি জিমিং বলেন, 'চীন যদি প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরে প্রকল্পের বিষয়ে "চীনা ঋণের ফাঁদ বা ভূ-রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা" উল্লেখ করে কারও পরামর্শে বাংলাদেশ যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, তাহলে একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি হবে।'

২০২০ সালের জুলাইয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কাছে একটি চিঠি দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চীনের কাছ থেকে ৯৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছিল। 

বাংলাদেশ সরকার মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১৫ শতাংশ বা প্রায় ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ বহন করবে।

এই প্রকল্পে নাব্যতার জন্য নদী ড্রেজিং, মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ, টাউনশিপ, নদীর দুই ধারে শিল্প, জলাশয় ও সেচের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।

তিস্তা অববাহিকায় ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর সেচযোগ্য জমির বেশির ভাগই শুষ্ক মৌসুমে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। 

কর্মকর্তারা জানানা, ২০১৩-১৪ সালে মোট সেচযোগ্য জমির মাত্র ৩৫ শতাংশে চাষ সম্ভব হয়েছিল।

ভারতের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে ২০১১ সালে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই করতে পারেনি বাংলাদেশ।

সম্প্রতি গত ৯ অক্টোবর চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং রংপুরে তিস্তা নদী পরিদর্শন করেন। স্থানীয় সরকার ও জনগণ প্রকল্পটি চায় কি না, সেটি নিশ্চিত হতে তিনি এ পরিদর্শন করেন।

তিনি বলেন, 'সৌভাগ্যবশত আমি পরিদর্শনে অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি। জনগণ এই প্রকল্প সম্পর্কে আগ্রহী এবং এ বার্তা চীনা কর্মকর্তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে সাহায্য করবে।'

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, 'রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তার উপায় খুঁজতে চীন সক্রিয় আছে এবং ইতোমধ্যেই কিছুটা এগিয়েছে।'

'আমরা নীরবে কাজ করছি। আমরা কর্মপ্রবণ, বক্তা নই,' বলেন তিনি।

সম্প্রতি মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘনের বিষয়ে লি জিমিং বলেন, 'বাংলাদেশের অনুরোধের পর চীন মিয়ানমারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেছে।'

'আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে এ বিষয়ে জানানো হবে,' যোগ করেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিজিএসের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। এতে আরও বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফিরদৌস, মুন্সী ফয়েজ আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ ও ড. দেলোয়ার হোসেন।

Comments

The Daily Star  | English

Palli Bidyut Protest: Staff shortage sparks concerns over Eid power supply

Demonstrators' demands include removal of REB chairman, unified service rule

3h ago