৪৩ কোটির বাড়ি ও প্রকল্প ব্যয় বনাম কৃচ্ছ্রতাসাধনের গল্প

একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে, সামনে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে বলে সতর্ক করা হচ্ছে, সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষায় জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান জানানো হয়েছে, তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আর বিপরীতে প্রায় সব ধরনের প্রকল্পেরই সময় ও ব্যয় বাড়ছে কয়েক গুণ। দেশের অর্থনীতির এই 'অস্থিতিশীল' সময়ে এসেও হাতে নেওয়া হচ্ছে ব্যয়বহুল প্রকল্প।

একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে, সামনে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে বলে সতর্ক করা হচ্ছে, সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষায় জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান জানানো হয়েছে, তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আর বিপরীতে প্রায় সব ধরনের প্রকল্পেরই সময় ও ব্যয় বাড়ছে কয়েক গুণ। দেশের অর্থনীতির এই 'অস্থিতিশীল' সময়ে এসেও হাতে নেওয়া হচ্ছে ব্যয়বহুল প্রকল্প।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য প্রায় ৪৩ কোটি টাকা খরচে বাসভবন তৈরি করছে সরকার। সরকারি তহবিলের অর্থ দিয়ে ইস্কাটন গার্ডেনে এ বাসভবন নির্মিত হবে।

২০১২ সালে শুরু হওয়া মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় গত জুলাইয়ে আরও ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা করা হয়। এর আগে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে মেট্রোরেলের নির্মাণ ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও গত জুলাইয়ে প্রকল্পের মেয়াদও বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত দ্রুত বাস চলাচলের জন্য নেওয়া ৫ বছরের ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ১০ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু গত জুলাই পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮১ শতাংশের মতো। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১০৯ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ও সময়সীমা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর। সরকার এখন বিআরটি প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করেছে ২০২২ সাল এবং নতুন করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।

বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতা সত্ত্বেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনূর্ধ্ব ১৫০ আসনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিতর্কের মধ্যেই আরও ২ লাখ ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন।

সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এলইডি ডিসপ্লের মাধ্যমে প্রচারে তথ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তর এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মিলে ২৬০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে গত জুনে ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প শেষ হয়েছে।

২০২৫ সালের মধ্যে ইউরিয়া সারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্পটি নেওয়া হয় ৪ বছর আগে। এর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। গত জুনে এর সময়সীমা শেষ হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই বরাদ্দের অর্ধেক অর্থ ব্যয় হয়েছে। তবে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এখন আরও ২ বছর সময় এবং আরও ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।

নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৯ বছর বেশি নিয়ে ও ৬১ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে অবশেষে গত ১০ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়েছে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। সৌদি আরব থেকে নেওয়া ৩৭৭ কোটি ৬২ লাখ টাকায় সেতুর কাজ ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রকল্পের জন্য পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ দিতেই ৬ বছর সময় নেন। সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এর মধ্যে প্রকল্পের খরচ দাঁড়ায় ৬০৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকায়।

ড. ইফতেখারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

এখন এমন একটা সময় যখন বেশকিছু প্রকল্প বা বেশকিছু ব্যয় সংকোচনের দৃষ্টান্ত সরকার স্থাপন করতে পারত বা পারে বলে আমরা মনে করি। রাজনৈতিক বক্তব্যে তা বলা হচ্ছে। কিন্তু, সেগুলোর বাস্তবিক কোনো প্রয়োগ আমরা দেখছি না।

— ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ৩ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫ বছর পর এসে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং এর জন্য ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় ও আরও ২ বছর মেয়াদ বেড়েছে। সরকার ২০১৭ সালের জুলাইয়ে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়, যার মূল ব্যয় ছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং কাজ শেষ করার জন্য সময়সীমা ছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। এই প্রকল্প ব্যয় ৩২ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা করা হয় এবং সময়সীমা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

গত ১৫ বছরে ঢাকার ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকার খরচ করেছে প্রায় ১১৯ কোটি টাকা। এই পরিকল্পনায় রাজধানীর ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমের আধুনিকায়নে কিছু উচ্চাভিলাষী পরীক্ষা-নিরীক্ষাও ছিল। এর মধ্যে রয়েছে সিগন্যাল লাইট ডিজিটাল করা এবং কিছু ব্যস্ততম মোড়ে টাইমার কাউন্টডাউন ও ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা। কিন্তু, সেসব পরিকল্পনায় কোনো কাজই হয়নি। কেননা, ২ কোটিরও বেশি মানুষের এই নগরীতে যানজট যেমন বিশৃঙ্খল ছিল, তেমনই রয়ে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে আরও অবনতি হয়েছে। এখনো সেই ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারাতেই হচ্ছে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে আছে, তা লাঘবে কী করা হচ্ছে? উচিত ছিল কী? সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে বার্তা দিতে হবে যে, সরকারের সদিচ্ছা আছে, তাহলেই জনগণকে কৃচ্ছ্রতাসাধনের কথা বলা যেতে পারে।

— ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

২০১২ সালের নভেম্বরে ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। তখন বলা হয়েছিল, ২০১৫ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এখন সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৭ সাল ও খরচ আরও ২ হাজার ১৫৮ কোটি ৯৬ লাখ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। প্রকল্পটির ব্যয় ও সময় আবারও বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদিত হলে প্রকল্পের বয়স গিয়ে ঠেকবে ১৫ বছরে। আর খরচ হবে ৩ হাজার ২৬৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা প্রাক্কলিত খরচের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বেশি।

২০১৭ সালে সাড়ে ৪ বছর মেয়াদি পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প শুরু হলেও পরে এর মেয়াদ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ বছর করা হয়। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ১৮ শতাংশ। মেয়াদ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত সুড়ঙ্গ পথ কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা, যা এখন বেড়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

চলমান সংকট বা সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় সরকারের বক্তব্য আর বাস্তবে যা করা হচ্ছে, তা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তার মতে, সরকার আসলে কী বার্তা দিচ্ছে, তা সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'চলমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় আমরা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এক ধরনের ইতিবাচক অবস্থানের ইঙ্গিত দেখেছি। যেমন: কৃচ্ছ্রতাসাধন থেকে শুরু করে মানুষকে সংকটের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষের কথা উল্লেখ করে মানুষের ব্যয় সংযত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু, এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বেশকিছু উদ্যোগও অব্যাহত আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের আরও আগেই প্রস্তুত হওয়া উচিত ছিল। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা বিশেষ কিছু উদ্যোগ বিভিন্ন খাতে দেখেছি। কিন্তু, সার্বিকভাবে কোনো কৌশল প্রণীত হতে দেখা যায়নি বা দেশবাসীকে জানানো হয়নি যে, বহুমুখী সংকট মোকাবিলায় কীভাবে কাজ করা হবে।'

'এ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতেও চলমান প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধি থেকে শুরু করে নতুন প্রকল্পসহ প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে। যার ফলে দেশবাসী দ্বিধায় আছেন। সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষসহ চলমান সংকট মোকাবিলায় জন্য প্রধানমন্ত্রী যাদের প্রস্তুত হতে আহ্বান করছেন, তাদেরই অর্থে এসব প্রকল্পগুলো পরিচালিত হয়। অর্থাৎ যাদের অর্থে এসব প্রকল্প, তাদেরকেই সংকটের জন্য প্রস্তুত হতে বলা হচ্ছে। তাহলে কী বার্তাটা যাচ্ছে, তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। তাহলে কি শুধু সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে যারা সংকটকালে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদেরই দায়? নাকি সংকটকে পুঁজি করে যারা সুবিধা অর্জন করছে তাদের?', যোগ করেন তিনি।

সরকারকে ব্যয় সংকোচনের দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'এখন এমন একটা সময় যখন বেশকিছু প্রকল্প বা বেশকিছু ব্যয় সংকোচনের দৃষ্টান্ত সরকার স্থাপন করতে পারত বা পারে বলে আমরা মনে করি। রাজনৈতিক বক্তব্যে তা বলা হচ্ছে। কিন্তু, সেগুলোর বাস্তবিক কোনো প্রয়োগ আমরা দেখতে পারছি না। যার ফলে সামনে কী আসছে, তা নিয়ে মানুষ আরও বেশি শঙ্কিত হচ্ছে। আবার একটা বিষয় পরিষ্কার হচ্ছে যে, এ সংকট ও সংশ্লিষ্ট নেতিবাচক প্রভাবে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে তুলনামূলক নিম্ন আয়ের মানুষের ওপরেই বোঝাটা বেশি পড়বে, তা কর্তৃপক্ষ মেনে নিচ্ছে এবং এই বার্তাটাই তারা দিতে চাচ্ছেন।'

রাজনীতিক বা নীতি-নির্ধারকরা শুধু কথার কথা বলছেন, যা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার ভাষ্য, চলমান পরিস্থিতিতে রাজনীতিক বা নীতি-নির্ধারকরা যা বলছেন, আর বাস্তবে যা হচ্ছে, তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অনেক প্রকল্পের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে যে, সেটা তেমন জরুরি কিছু না। 'মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য প্রায় ৪৩ কোটি টাকা খরচে বাসভবন তৈরি করার জন্য প্রকল্প নিয়ে সংবাদ হলো। এই সময়েও এসে কেন এ প্রকল্প? তাদের কি বাড়ি নেই? তার মানে প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন, সেগুলো আমলে নেওয়া হচ্ছে না', বলেন তিনি।

চলমান সংকট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, 'শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে বা আইএমএফ ঋণ দেবে, তা তো যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে সঙ্গে তো অন্যান্য সব খাতেই উদ্যোগ দেখতে হবে। এই যে মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে আছে, তা লাঘবে কী করা হচ্ছে? জ্বালানির দাম বাড়ানো হলো। কিন্তু, উচিত ছিল কী? সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে বার্তা দিতে হবে যে, সরকারের সদিচ্ছা আছে, তাহলেই তো জনগণকে কৃচ্ছ্রতাসাধনের কথা বলা যেতে পারে।'

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সাধারণ মানুষকে কৃচ্ছ্রতাসাধনের কথা বলা হচ্ছে, অপরদিকে এক শ্রেণির ধনী মানুষ কৃচ্ছ্রসাধন করবে না, সরকার যথাযথ ভূমিকা পালন করবে না, তা তো ঠিক না। যা করার একযোগে সবাই মিলে করতে হবে। সেই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গেলে আমলা ও নীতি-নির্ধারকদের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। সেটা দৃশ্যত হতে হবে, শুধু মুখে বললে হবে না। অন্যথায় চলমান সংকট নিরসন সম্ভব নয়। কারণ, মূল্য নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ বাড়ানোসহ অনেক কিছুই তো সাধারণ মানুষের আওতায় নেই। সরকার দৃশ্যত উদ্যোগ নিয়ে তারপর জনগণকে কৃচ্ছ্রতাসাধন করতে বলতে হবে। তাহলে জনগণ আহ্বানে সাড়া দেবে। জনগণ তো নেতৃত্ব দেবে না। সরকার মূল ভূমিকা পালন করলে জনগণ সহায়ক হিসেবে পাশে থাকবে।'

Comments