সিলেটে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ‘মহাবিপন্ন’ বাঘাইড় মাছ

সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী লালবাজারে বিক্রির জন্য প্রদর্শনী হচ্ছে ১৫০ কেজি ওজনের একটি প্রকাণ্ড বাঘাইড় মাছ। অথচ মহাবিপন্ন এ মাছটি শিকার ও ক্রয়-বিক্রয় আইনত নিষিদ্ধ।
বাঘাইড়
সিলেট নগরীর লালবাজারে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে ১৫০ কেজি ওজনের বিক্রয়নিষিদ্ধ মহাবিপন্ন বাঘাইড় মাছ। মাছটি দেখার জন্য দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। ছবিটি আজ মঙ্গলবার বিকেলে তোলা। ছবি: শেখ নাসির/ স্টার

সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী লালবাজারে বিক্রির জন্য প্রদর্শনী হচ্ছে ১৫০ কেজি ওজনের একটি প্রকাণ্ড বাঘাইড় মাছ। অথচ মহাবিপন্ন এ মাছটি শিকার ও ক্রয়-বিক্রয় আইনত নিষিদ্ধ।

বাঘাইড় বা বাঘাইর (Gangetic Goonch) এর বৈজ্ঞানিক নাম Bagarius yarrelli। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর রেড লিস্ট অনুযায়ী মিঠা পানির এ মাছটি 'মহাবিপন্ন'।

এছাড়াও বাঘাইড় মাছ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ২নং তফসিলভুক্ত একটি সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী।

এই আইনানুযায়ী বাঘাইড় মাছ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন কিংবা দখলে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে।

লালবাজারে প্রদর্শিত বাঘাইড় মাছটির বিক্রেতা বিল্লাল মিয়া জানান, 'মাছটি আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় কুশিয়ারা নদী থেকে জেলেদের হাতে ধরা পড়ে। পরে জেলেদের কাছ থেকে কিনে বিক্রির জন্য লালবাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। এর দাম ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা। কাল সকালে মাছটি কেটে কেজিদরে বিক্রি করা হবে।'

বাঘাইড় মাছ ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে আইনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তার জানা নেই বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত ১১ এপ্রিল কুশিয়ারা নদী থেকে শিকার করা ৬০ কেজি ওজনের বাঘাইড়, ২৭ মার্চ সুরমা নদী থেকে শিকার করা ১০০ কেজি ওজনের বাঘাইড় ও ১২ জানুয়ারি সুরমা নদী থেকে শিকার করা ১২০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ এই বাজারে বিক্রি হয়েছিল। এছাড়াও এ বাজারে নিয়মিত বিভিন্ন ছোট-মাঝারি আকারের বাঘাইড় মাছ বিক্রি হয়।

উল্লেখ্য যে বড় আকারের বাঘাইড় মাছ বিক্রির জন্য লালবাজারে নিয়ে এলে নগরীতে মাইকিং করা হয় এবং নাগরিকদের প্রদর্শনীর জন্য মাছটি বাজারে রাখা হয়। বাঘাইড় বিক্রিকে কেন্দ্র করে লালবাজারে উৎসবমূখর পরিস্থিতি হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম বলেন, 'সিলেটের সুরমা কুশিয়ারায় এখনো এতবড় বাঘাইড় মাছ রয়েছে বিষয়টি খুবই আশাব্যাঞ্জক। কিন্তু মহাবিপন্ন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ এ মাছ ঢালাওভাবে শিকার ও বিক্রির বিষয়টি দুঃখজনক। এভাবে শিকার করতে থাকলে অচিরেই মাছটি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।'

তিনি বলেন, 'বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনানুযায়ী এ মাছটি বিক্রি নিষিদ্ধ, তাই বন অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর এ মাছ শিকার ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা।'

বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও প্রকৃতি অঞ্চল মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'বাঘাইড় মাছ বন্ধে কিছুদিন আগে মৌলভীবাজারে একটি অভিযান চালাতে গিয়ে আমরা বুঝেছি যে অভিযান পরিচালনার আগে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মাছ শিকারী ও বিক্রেতারা আইনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানেন না।'

তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে বাঘাইড় মাছ সংরক্ষণের বিষয়ে পোস্টার ও লিফলেট প্রস্তুত করেছি। আমরা দ্রুতই সিলেট নগরীর লালবাজারে এ ব্যাপারে প্রচারণা চালাব। পরবর্তীতে বাঘাইড় বা বিক্রয় নিষিদ্ধ অন্য কোনো মাছ বিক্রির জন্য রাখলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'

Comments