হাইকোর্ট-প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষিত, জুম বাগান-বন কাটছে রাবার ইন্ডাস্ট্রির মালিকপক্ষ

স্থানীয় প্রশাসন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে লামার সরইয়ে রেঙয়ন ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়ার জুম ভূমি ও পাড়াবাসীদের ফসলি বাগান কাটা শুরু করেছে লামার রাবার ইন্ডাস্ট্রির মালিকপক্ষ।
জুম ভূমি ও পাড়াবাসীদের ফসলি বাগান কাটছেন রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ নিয়োজিত শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় প্রশাসন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে লামার সরইয়ে রেঙয়ন ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়ার জুম ভূমি ও পাড়াবাসীদের ফসলি বাগান কাটা শুরু করেছে লামার রাবার ইন্ডাস্ট্রির মালিকপক্ষ।

পাড়াবাসীদের অভিযোগ, গত ২৩ অক্টোবর থেকে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আদিবাসী ম্রো গ্রামবাসীদের ফসলি বাগান, আম গাছ, কাঁঠাল গাছ, কলা গাছসহ সব ধরনের গাছ কেটে ফেলছে।

স্থানীয় অধিবাসী রেঙয়ং ম্রো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২৩ তারিখ থেকে তারা আমাদের গ্রামের বাগান কাটা শুরু করেছে। আজও সকাল থেকে বন কাটছে রাবার বাগান মালিকপক্ষের নিয়োজিত শ্রমিকরা।'

তিনি বলেন, 'প্রতিদিন ৬০ জনের বেশি বহিরাগত এসে আমাদের বাগানগুলো জোরপূর্বক কেটে দিচ্ছে।'

রুংধিজন ত্রিপুরা, যোহন ত্রিপুরা, লাংকম ম্রোসহ গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা একই কথা বলেন।

তারা জানান, সেলিম নামে একজন এই কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্তৃক ১৪৪/৪৫ ধারায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও রাবার কোম্পানির বনভূমি ও ফসলি বাগান কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে লামার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তফা জাবেদ কাইসার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না। গ্রামের কেউ বন কাটার বিষয়ে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।'

এই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির প্রকল্প পরিচালক কামাল উদ্দিন রেগে যান। প্রথমে অস্বীকার করে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'না, আমাদের লোকজন কোনো বাগান কাটেনি। পাহাড়িরাই কেটেছে। তারাই আমাদের লিজ নেওয়া বাগানে অবৈধভাবে গ্রাম বানিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ডেইলি স্টার, প্রথম আলোসহ সব সাংবাদিকরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে। ওখানে সব জায়গা আমাদের। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লিজ নিয়েছি। ওই পাহাড়িগুলো কোথা থেকে এলো?'

আজ যারা বন ও বাগান কাটছে তারা রাবার বাগান কর্তৃপক্ষের কেউ না হলে তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে পুলিশ ধরে নিতে পারে কি না জানতে চাইলে নমনীয় হন কামাল। এরপর তিনি স্বীকার করেন, গত ২৩ অক্টোবর থেকে তাদের নির্দেশনাতেই সেখানে গাছ কাটা চলছে।

গ্রামবাসীরা জানান, ওই গ্রামের প্রায় ৪০০ একর ভূমিতে তারা বংশ পরম্পরায় জুম চাষ ও বাগান করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি কোম্পানি রাবার প্লটের নামে জুম্মদের এসব ভূমি দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা শুরু করে।

Comments