‘কাউকে প্রথম মা-বাবা বলে ডাকব’

ঝলমলে আলোকসজ্জা, রঙিন বিয়ের মঞ্চ, কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজারের এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র দেখে মনে হয় যেন সত্যিই বিয়ে বাড়ি। এখানে বেড়ে ওঠা দুই এতিম মেয়ে সাকিলা ও নয়নতারার বিয়ে ছিল আজ। কেন্দ্রে এই প্রথম এরকম কোনো বিয়ের আয়োজন।
মৌলভীবাজার বিয়ে
সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজারের এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আজ বৃহস্পতিবার সাকিলা ও নয়নতারার বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। অভিভাবক হয়ে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

ঝলমলে আলোকসজ্জা, রঙিন বিয়ের মঞ্চ, কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজারের এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র আজ যেন বিয়ে বাড়ি হয়ে উঠেছে। এখানে বেড়ে ওঠা দুই এতিম মেয়ে সাকিলা ও নয়নতারার বিয়ে ছিল আজ। কেন্দ্রে এই প্রথম এরকম কোনো বিয়ের আয়োজন।

নয়নতারা ও সাকিলা পরেছিলেন টুকটুকে লাল লেহেঙ্গা। দুই বর সেজেছিলেন বরের সাজে। সামাজিক রীতি অনুযায়ী দুই বরকে বরণ করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের ওসমানীনগরের বর আল আমিনের সঙ্গে কনে লিমা আক্তার সাকিলার (১৮) এবং মৌলভীবাজার সদরের কনকপুরের বর মো. সাব্বিরের সঙ্গে কনে মোছাম্মাৎ নয়নতারার (২৪) বিয়ে সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে নতুন এক পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হলেন নয়নতারা ও সাকিলা।

এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, 'নয়নতারা ও সাকিলা দুজনই সিলেটের বেবি হোমে বেড়ে উঠেছেন। বেবি হোমে ৭ বছর বয়স হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী তাদের সিলেটে সরকারি শিশু পরিবারে পাঠানো হয়। শিশু পরিবারে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর তাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয় মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। নয়নতারা এই কেন্দ্রে আসেন ৬ বছর আগে। তিনি এখানে থেকে সেলাই ও বাটিকের কাজ শিখেছেন। অন্যদিকে সাকিলা এই কেন্দ্রে এসেছেন ৬ মাস আগে। সাকিলা সেলাই ছাড়াও পোল্ট্রি, গাড়িচালনা ও বিউটি পার্লারের কাজ শিখেছেন। এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে গভীর নলকূপের কাজ করতে এসে সাকিলার সঙ্গে পরিচয় হয় আল-আমিনের।

লেডিস ক্লাবের সভাপতি কবিতা ইয়াসমিন বলেন, 'তাদের পরিবারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। পরিবারের সম্মতির ভিত্তিতেই বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করতে যা কিছু প্রয়োজন আমরা সব করেছি।'

তিনি জানান, দুই মেয়ের অভিভাবক হয়ে বিয়ে দেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।

গায়ে হলুদে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীনা রহমান, কবি সৈয়দ মোসাহিদ আহমদ।

আজ বৃহস্পতিবার বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তানিয়া সুলতানা, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মল্লিকা দে, সমাজসেবা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, সমাজসেবা অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান, সিলেটের উপপরিচালক মো. আব্দুর রকিব।

মৌলভীবাজার সদরের কনকপুরের বর মো. সাব্বির বলেন, 'স্ত্রী নয়ন তারার পাশে দাঁড়িয়েছি যাতে ও কখনো নিজেকে একা না ভাবে। প্রথম দেখা হওয়াতেই নয়ন বলেছিল সে এতিম। সে একা। এমনভাবে বলেছিল যা আজও ভুলতে পারিনি।'

তিনি বলেন, 'আজকের এই আয়োজন তাদের সাহস জুগিয়েছে। সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিরা আয়োজন করেছেন দেখে ভালো লেগেছে।'

কনে সাকিলা ও নয়নতারা বলেন, 'কাউকে আমরা মা-বাবা ডাকার সুযোগ পাইনি। এই প্রথম শ্বশুর ও শাশুড়িকে মা-বাবা বলে ডাকব। নতুন ঠিকানা পাব। নতুন জীবন শুরু হবে।'

সাকিলার বর আল-আমিন বলেন, 'সাকিলার বাবা-মা নেই এটা জেনেই বিয়ে করেছি। আমার বাবা-মা সবারই সম্মতি আছে।'

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, 'আমাদের মৌলভীবাজারের জন্যও আনন্দের একটি দিন আজ। কারণ আমাদের শিশু পরিবারের সাকিলা ও নয়নতারার বিয়ে হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজসেবা অফিস এটির আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে ১ লাখ করে উপহার দিয়েছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago