ঐতিহ্যের মহিষের গাড়িতে গেলেন বর

বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে মহিষের গাড়িতে বিয়ে করতে গেলেন বর। গতকাল শুক্রবার উপসহকারী মেডিকেল অফিসার উমর ফারুক (৩০) মহিষের গাড়িতে করে বিয়ে করতে যান।
মহিষের গাড়িতে করে বিয়ে করতে যাচ্ছেন বর। ছবিটি শুক্রবার বিকেলে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ি এলাকায় শেখ হাসিনা ধরলা সেতু এলাকায় তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে মহিষের গাড়িতে বিয়ে করতে গেলেন বর। গতকাল শুক্রবার উপসহকারী মেডিকেল অফিসার উমর ফারুক (৩০) মহিষের গাড়িতে করে বিয়ে করতে যান।

উমর ফারুক কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের চন্দ্রখানা মুসুল্লি পাড়া এলাকার ফজলুল হকের ছেলে।

শুক্রবার রাতে তার বিয়ে হয়েছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের দেবদেবীর হাট এলাকার বেলাল হোসেনের মেয়ে বিলকিস আক্তারের (২৩) সঙ্গে। বরের সঙ্গে ২টি মহিষের গাড়ি ছিল। তবে অধিকাংশ বরযাত্রী ৮টি মাইক্রোবাস ও মোটরেসাইকেলযোগে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হন।

বর উমর ফারুক শুক্রবার বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার বাবা বউ এনেছেন গরুর গাড়িতে। দাদা বিয়ে করেছে হাতির পিঠে চড়ে। বংশের পুরাতন ঐতিহ্য ধরে রাখতে তিনিও মহিষের গাড়িতে চড়ে বিয়ে করবেন আশা করেছিলেন। বংশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তিনি শুক্রবার বিকালে মহিষের গাড়িতে বিয়ে করতে যান।

তিনি বলেন, 'আমি খুব খুশি হয়েছি। মহিষের গাড়ি করে বিয়ে করতে আসতে পারায় আমি বংশের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পেরেছি।'

বিয়ের ঘটক রাজু সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, শুক্রবার রাতে ৯ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়েছে। বরের ইচ্ছা তাদের বংশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে মহিষের গাড়িতে চড়ে বিয়ে করতে যাবেন। এ ব্যাপারে কনে পক্ষের লোকজনও কোনো আপত্তি করেননি। বরং তারা খুশি হয়েছেন। বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। মহিষের গাড়িতে করে বিয়ে করতে আসা বরকে দেখার জন্য কনে বাড়িতে মানুষের ঢল নামে।

বরযাত্রী মহসিনা বেগম (৩৬) ডেইলি স্টারকে বলেন, মহিষের গাড়িতে চড়ে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার আনন্দটা ছিল অন্যরকমের। এর আগে কোনোদিন এ আনন্দ উপভোগ করেননি। মহিষের গাড়িতে চড়ে যাওয়ার সময় অনেক আনন্দ পেয়েছি। রাস্তা পাশে লোকজন দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখেন। এই স্মৃতি কোনদিনই ভুলতে পারবো না।

শিমুলবাড়ী এলাকার কৃষক মোবারক আলী (৭৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, গরু ও মহিষের গাড়িতে চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার দৃশ্য আগে দেখা যেতো। এ সংস্কৃতি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। বহু বছর পর এমন দৃশ্য দেখে তিনি পুলকিত। পুরনো দিনের স্মৃতিতে ফিরে গেছেন।

তিনি বলেন, 'রাস্তা দিয়ে বর যখন মহিষের গাড়িতে করে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন, তখন আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখেছি। আমিও গরুর গাড়িতে চড়ে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম।'

কনের বাবা বেলার হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, বর মহিষের গাড়িতে করে বিয়ে করতে আসায় তারা খুশি। পুরোনো দিনের স্মৃতি আগলে রেখেছেন জামাই। এজন্য তারা এমনকি গ্রামের লোকজন বরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমার জামাই মহিষের গাড়ি নিয়ে এসে আমার মেয়েকে বিয়েকে বিয়ে করেছে, এটা আমাদের এলাকায় স্মৃতি হয়ে থাকবে। স্থানীয় লোকজন অনেক বছর ধরে এ গল্প করতে পারবেন।'

Comments