দ্বার খুললো দেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মনকাশাইর গ্রামে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বার উন্মোচিত হলো।
৪০৩টি ঘরের মধ্যে মাঝখানের ৫০টি ঘরে লাল রঙ এবং চারদিকের ৩৫০টি ঘরকে সবুজ রঙে রাঙানো হয়েছে। ছবি: মাসুক হৃদয়/ স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মনকাশাইর গ্রামে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বার উন্মোচিত হলো।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল শুক্রবার ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন।

কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মনকাশাইর মৌজায় ১২ দশমিক ৩৫ একর জায়গার উপর এ প্রকল্পটি নির্মিত। ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য এখানে মোট ৪০৩টি পাকা ঘর তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে ২ শতক জমির উপর। এছাড়া এ প্রকল্পে বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির, বাজার, পুকুর, কবরস্থান, গভীর নলকূপ ও বিদ্যুৎ-এর ব্যবস্থা থাকবে।

ইউএনও'র দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দেশের সর্ববৃহৎ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে প্রায় এক হাজার ৬০০ মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। সে হিসেবে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ২টি বেড রুম, রান্নাঘর ও শৌচাগারের পাশাপাশি একটি বারান্দাও রয়েছে।

ইউএনও জানান, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার ভিত্তিক একটি ব্যতিক্রমী আশ্রয়ণ প্রকল্প। ব্যতিক্রম হিসেবে এ প্রকল্পটিতে প্রায় ৮ দশমিক ০২ শতক পরিমাণ জায়গায় বিদ্যালয়, ৭ শতক জায়গায় মসজিদ, প্রায় ৬ দশমিক ৮৮ শতক জায়গায় মন্দির, ১৫ শতক জায়গায় খেলার মাঠ এবং ১৩ দশমিক ৬৯ শতক জায়গায় পুকুর নির্মাণ করা হবে। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে বনায়নের পাশাপাশি এখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও স্বাবলম্বী করে তুলতে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, এই প্রকল্পে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবার পানি ও বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর, বিআরডিবি ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেবেন। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য তারা সরকারি ঋণ সহায়তা পাবেন। এক কথায়, সামাজিক সুবিধার যা যা দরকার, সবই এই প্রকল্পে থাকবে। একসঙ্গে এতসব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশের আর কোথাও আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দুরে একেবারে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষে এই প্রকল্পটির অবস্থান। প্রকল্পের দিকে তাকালে যে কারো চোখ আটকাবে। ৪০৩টি ঘরের মধ্যে মাঝখানের ৫০টি ঘরে লাল রঙ এবং চারদিকের ৩৫০টি ঘরকে সবুজ রঙে রাঙানো হয়েছে। ড্রোন ক্যামেরায় তোলা ছবিতে দেখা যায়, এ যেন লাল-সবুজের এক টুকরো বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য, মনকাশাইর মৌজায় একসঙ্গে বিশাল পরিমাণ খাসজমি উদ্ধারের খবর জানতে পেরে এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প করার প্রচেষ্টা চালায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে মন্ত্রীর প্রচেষ্টায় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। গত ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল মাটি ভরাট কাজের মধ্য দিয়ে এই প্রকল্প নির্মাণের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আগে থেকে একসঙ্গে সব নির্মাণ সামগ্রী কিনে রাখায় মাত্র দেড় বছরেই আলোর মুখ দেখে প্রকল্পটি। 

Comments