জিপিএ ৫ পেলেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হরিবোলের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বেগে পরিবার

হরিবোল বোনার্জি। ছবি: সংগৃহীত

জন্মের পর থেকে পৃথিবীর আলো দেখার সৌভাগ্য হয়নি মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র হরিবোল বোনার্জির। চা শ্রমিক বাবা-মায়ের শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তান হওয়ায় নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন পদে পদে। তারপরও সব বাধা উপেক্ষা করে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছেন হরিবোল বোনার্জি।

তার এই অর্জনে খুশি এলাকার মানুষ, খুশি পাশে থেকে সহায়তা করা শিক্ষকরা।

এ বছর মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায়  অংশ নিয়েছিলেন হরিবোল। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধিনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করেন তিনি।

হুগলিছড়া চা বাগানের শিক্ষক আপন দাস দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, হরিবোলের বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের হুগলিছড়া চা বাগানে। তার বাবা অনিল বোনার্জি এবং মা বিশখা বোনার্জি চা শ্রমিক। অভাব-অনটনের মাঝে হরিবোলের পড়ালেখা শুরু হয়েছিল এনজিও ব্র্যাকের স্কুল থেকে। লেখাপড়ায় অদম্য হরিবোল সেখান থেকেই পিএসসিতে ভালো ফল করেন।

তিনি বলেন, 'মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলে হরিবলের থাকার জায়গা হয় বিদ্যালয়ের পাশেই মৌলভীবাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসে। আমরা বিভিন্ন সময় তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। আজকের তার সফলতায় আমরা খুশি।'

হরিবোল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এতটা দূর আসতে পারব ভাবিনি। তবে আমার পড়াশোনার আগ্রহ বেড়ে যায় আমি যখন পিএসসি পরীক্ষা দেই। সেই পরীক্ষায় আমি জিপিএ ৪.৮৩ পাই। ভর্তি হই মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি অন্যান্য সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছি। আমার সহযোগী হিসেবে অষ্টম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী ছিল। আমি বলে বলে দিয়েছি আর সে লিখে দিয়েছে।'

গায়ক হওয়ার ইচ্ছে ছিল উল্লেখ করে হরিবোল বলেন, 'অনেকটা পথও এগিয়েছিলাম। কিন্তু আর গায়ক হয়ে উঠা হয়নি। এখন একজন সমাজকর্মী ও শিক্ষক হতে চাই।'

হরিবোল বোনার্জির বিষয়ে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ খ ম ফারুক আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমাদের ছাত্র হরিবল বোনার্জি এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। সে গরীব পরিবারের সন্তান, অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করে এই ফলাফল অর্জন করেছে।'

হরিবোলের বাবা চা শ্রমিক অনিল বোনার্জি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছি, আমার ছেলের পরবর্তী লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে পারব কি না।'

হরিবোলের মা বিশাখা বোনার্জি বলেন, 'বেশ কয়েকজন আত্মীয়-প্রতিবেশীর কাছে সাহায্য চেয়েছি, কিন্তু এখনো কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি।'

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হরিবোলের ফলাফলে আমরা খুশি। ১৮ বছর বয়সের পর আমরা কোনো সহায়তা দেয় না। তবে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব, দেখি কি করা যায়।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

8h ago