‘বাসের সংখ্যা কমিয়ে আনার চাপ আছে’

ঢাকা থেকে বের হতেও ‘দুর্ভোগ’
ছবি: স্টার

টঙ্গী-নরসিংদী রুটে দৈনিক উত্তরা পরিবহনের ৪২টি বাস চললেও আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলছে ৪টি। একই অবস্থা এই রুটে চলাচলকারী অন্যান্য বাসেরও।

সরেজমিনে টঙ্গী এলাকার বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য গতকাল রাত থেকেই পুলিশের পক্ষ থেকে বলা তাদের বলা হয়েছে। কেউ কথা না শুনলে মামলা-জরিমানা করে গাড়ি আটকে রাখা হবে বলেও বলা হয়েছে। তাই বাস কোম্পানিগুলোও ভয়ে আজ কম বাস চালাচ্ছে।

গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশন রোডের উত্তরা পরিবহনের এক কর্মী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ ভোররাত ৪টায় ১টি বাস যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। এরপর সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আর কোনো বাস চলেনি। অন্যান্য দিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরপর বাস যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। মালিকরাও সতর্কতার সঙ্গে বাস চালাতে বলেছেন। অবস্থা এমন যে, ফোন আসলে বাস চলে, আবার নিষেধ করলে বন্ধ করে রাখি। বাসের সংখ্যা কমাতে আমাদের ওপর চাপ রয়েছে।'

'যেসব যাত্রীরা আসছেন, তারা ফিরে যাচ্ছেন। আবার বাস কম চলার খবর পেয়ে অনেকে বাসা থেকে আর বের হচ্ছেন না', বলেন তিনি।

স্টেশন রোড এলাকার হিমাচল কাউন্টারের কর্মী গুলজার হোসেন জানান, টঙ্গী থেকে নোয়াখালী রুটে বাস বন্ধ আছে। স্বাভাবিক সময়ে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩টি বাস এ কাউন্টার থেকে যাত্রী নিয়ে যায়। কিন্তু, আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত একটি বাসও আসেনি।

আজ বাস কম চলায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ছবি: স্টার

তিনি জানান, টিকিট বিক্রি না হলে আমাদের লোকসান। কারণ আমাদের আয়ই হয় টিকিট বিক্রির ওপর।

ইকোনো পরিবহনের কাউন্টার স্টাফ ফয়সাল হোসেন জানান, গতকালের বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় বাস চলাচল বন্ধ আছে। অন্যান্য দিন স্বাভাবিক সময়ে ৪০টি বাস চলাচল করে থাকে। কিন্তু আজ সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনো বাস চলেনি।

হিমালয় পরিবহনের কাউন্টার কর্মী দেলোয়ার হোসেন জানান, টঙ্গী-নোয়াখালী রুটে ভোরে ২টি বাস চলেছে। এরপর দুপুরে বন্ধ থাকবে। আবার বিকেলের দিকে চলবে।

'রাজনৈতিক কারণে দেশের পরিস্থিতি ভালো না। কিছু হলেই বাসে আক্রমণ হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তা আর বাস নিরাপদ রাখতে বাস কম চালানো হচ্ছে', বলেন তিনি।

ঢাকা থেকে বের হতেও 'দুর্ভোগ'

গাজীপুর টঙ্গি স্টেশন রোড এলাকায় সাড়ে ৩ বছরের শিশু বায়েজীদকে কোলে নিয়ে ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন এনামুল হোসেন। মা অসুস্থ। তাই স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ময়মনসিংহ হালুয়াঘাট যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেও বাস পাচ্ছেন না। অন্যান্য সময় যেখানে ২ মিনিটের মধ্যেই বাস পাওয়া যায়।

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে এনামুল জানান, ভোরে গ্রামের বাড়ি থেকে কল দিয়ে জানিয়েছে মা খুব অসুস্থ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েই দেখি বাস নেই। রাজনৈতিক কারণে ঢাকায় প্রবেশে দুর্ভোগ না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু, ঢাকার বাইরে যেতেও কেন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে? আমরা তো কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থকও নই।'

'১ ঘণ্টা ধরে ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পা ও হাত প্রচণ্ড ব্যথা করছে। কিন্তু, শিশুকে তো কোল থেকে নামাতেও পারছি না। বাস পাব কি না, তাও বুঝতে পারছি না। যেভাবেই হোক, বাড়ি যেতেই হবে। বাস ছাড়া অন্য উপায়ে যেতে হলে বেশি খরচ লাগবে। ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চলে। এর মধ্য এভাবে বাস বন্ধ করে দিলে আমরা কোথায় যাব?', বলেন তিনি।

আজ সকাল থেকেই টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে কম। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে গেছে, ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসের জন্য এসে অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। বেশিরভাগ বাস কাউন্টার বন্ধ থাকায় অনেকে ফিরেও যাচ্ছেন। আবার অনেককে উপায় না পেয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে। ঢাকা থেকে দূর পাল্লার বাস কম চলাচল করায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

আজ বাস কম চলায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ছবি: স্টার

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের টঙ্গির মুন্নু গেট ট্রাফিক পুলিশ বক্স এলাকায় সকাল সাড়ে ৯টায় গিয়ে ১ ঘণ্টা যাবত অপেক্ষা করেছেন আজাদ হোসেন।

ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, গাজীপুর বোটবাজার থেকে টঙ্গী পর্যন্ত আসার পর সাভার যাওয়ার বাস পাচ্ছেন না। অন্যান্য দিন ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে বাস পাওয়া গেলেও আজ পাচ্ছেন না। উত্তরা পরিবহন, চলনবিল পরিবহন, বাদশা পরিবহন সবসময় পাওয়া যেত। 'বাস না পাওয়া গেলে কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না। বাস ছাড়া অন্য পরিবহনে যাওয়ার টাকাও নেই', বলেন তিনি।

টঙ্গী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন জানান, পারিবারিক জরুরি কাজে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য ৪০ মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেও বাস পাননি তিনি। অন্যান্য সময় ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলে ৩ থেকে ৪টি বাস পাওয়া যায়।

'বাস না চললে আগে থেকে ঘোষণা দেওয়ার উচিত ছিল। এখন বাস যদি না চলে, তাহলে ফেরত যাব। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ কি আছে?', বলেন ফাহিম।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মা‌লিক স‌মি‌তির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনা‌য়েত উল্লাহ ডেইলি স্টারকে টেলিফোনে বলেন, 'নয়াপল্টনে ঝামেলার কারণে পরিবহন মালিকরা সড়কে বাস তুলতে ভয় পাচ্ছেন। এ কারণে বাসের সংখ্যা কিছুটা কম হতে পারে। এমনিতে বাস কম রাখার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

1h ago