নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম নতুন রেললাইন, দূরত্ব কমবে ৯০ কিমি

বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা পর্যন্ত একটি কর্ড লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াতের সময় ও দূরত্ব কমে আসবে।
রেল লাইন
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা পর্যন্ত একটি কর্ড লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াতের সময় ও দূরত্ব কমে আসবে।

রেল কর্মকর্তারা বলছেন, এই লাইন চালুর পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের রেলপথের দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার কমে যাবে। একইসঙ্গে সময় কম লাগবে প্রায় ৯০ মিনিট।

নির্মাণের পর এই লাইনটি শুধু যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হতে পারে। বর্তমানে চালু থাকা ৩২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনটি সেক্ষেত্রে মালামাল পরিবহনে ব্যবহার হতে পারে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে গতকাল বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির কাছ থেকে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার অনুমতি পেয়েছে।

এই কাজের জন্য জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল, ফ্রান্সের ইজিআইএস ও মালয়েশিয়ার এইচএসএসের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়ামকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এই কনসোর্টিয়াম প্রায় ৩০ মাস সময় নিয়ে কর্ড লাইনসহ ১১টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা তৈরি করবে। এর জন্য খরচ হবে রেলওয়ের খরচ হবে ১৯৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

প্রকল্পটির পরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ে এ মাসের মধ্যে কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, কর্ড লাইন রেলওয়েতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে।

কর্ড লাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের সময় ইলেকট্রিক ট্রাকশন নির্মাণের কথা মাথায় রাখা হবে। অর্থাৎ, এতে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হতে পারে।

কর্ড লাইন নির্মাণের আলোচনা কয়েক দশক ধরে চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১০ সালে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল।

এমনকি, ২০১২ সালে রেল মন্ত্রণালয় একটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের আওতায় এই লাইন নির্মাণের প্রস্তাবও পাঠিয়েছিল। তবে অজ্ঞাত কারণে এই উদ্যোগে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি বলে জানান রেল কর্মকর্তারা।

বিলম্বের বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক জেনারেল কামরুল আহসানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, যেহেতু এটি একটি নতুন লাইন, এর বাস্তবায়নের জন্য অনেক জমি ও অর্থ প্রয়োজন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে গতকাল বলেন, 'এসব কারণে বিলম্ব হয়েছে। তবে এডিবি এই প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখানোয় আমরা এর বাস্তবায়নের বিষয়ে আশাবাদী।'

২০২০ সালের জুনে সরকার এই ২৩৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ১১টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে।

কর্ড লাইনের পাশাপাশি কনসোর্টিয়ামটি বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনে পদ্মা নদীর ওপর স্থাপিত ১০০ বছরেরও পুরনো হার্ডিঞ্জ সেতুর পাশাপাশি একটি নতুন সেতু তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজও করবে।

১১০ বছরের পুরনো হার্ডিঞ্জ সেতুটি ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল। এই সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ইতিহাস।

উল্লেখিত কাজের পাশাপাশি কনসোর্টিয়াম আরও কিছু ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ, মিটারগেজকে ব্রডগেজে রূপান্তর করাসহ অন্যান্য প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা তৈরি করবে।

কনসোর্টিয়ামের অন্যান্য দায়িত্বের মধ্যে আছে রোলিং স্টকের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করা ও সিগনালিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments