৩৬১ ট্রেনের ৯৯টিই চলছে না, ১৪ বছরে বিনিয়োগ ৭০ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতি ৩টি যাত্রীবাহী ট্রেনের মধ্যে ১টি ট্রেন অকার্যকর অবস্থায় আছে। এর পেছনে মূল কারণ জনবল ও ট্রেনের কোচ সংকট।

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতি ৩টি যাত্রীবাহী ট্রেনের মধ্যে ১টি ট্রেন অকার্যকর অবস্থায় আছে। এর পেছনে মূল কারণ জনবল ও ট্রেনের কোচ সংকট।

গত ১৪ বছরে সরকার রেলওয়ে খাতে ৭০ হাজার কোটি টাকার চেয়েও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি তাদের ৩৬১টি ট্রেনের মধ্যে অন্তত ৯৯টি ট্রেন চালু রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

যে ট্রেনগুলো চলছে না, তাদের বেশিরভাগই লোকাল, মেইল অথবা যাত্রীবাহী ট্রেন। এই ট্রেনগুলোর ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের মানুষ ও স্বল্প দূরত্বে ভ্রমণকারীরা এগুলোতে চড়তেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনবল ও কোচ পাওয়া সাপেক্ষে কিছু ট্রেনের কার্যক্রম আবারও শুরু করা হবে। ২০২০ সালের শুরুর দিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় এই ট্রেনগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

সূত্র জানিয়েছে, কিছু ট্রেন গত দশক থেকেই চলছে না। এই ট্রেনগুলো আর কখনো চালু করা সম্ভব হবে না বলেও তারা জানান।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩ হাজার ৯৩ কিলোমিটারের নেটওয়ার্ক ২টি জোনে বিভক্ত। ৩৬১টি ট্রেনের মধ্যে ১৯২টি পূর্ব জোনে এবং ১৬৯টি পশ্চিম জোনে চলাচল করে থাকে।

৯৯টি অকার্যকর ট্রেনের (মোট ট্রেনের ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ) মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম জোনে আছে যথাক্রমে ৫৬ ও ৪৩টি। এর মাঝে ৫৭টি লোকাল ট্রেন ও ১২টি মেইল ট্রেন।

এ ছাড়াও, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের কাজে সুবিধার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল স্থগিত রেখেছে।

কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার আগে এই রুটে ৮ জোড়া লোকাল ট্রেন ও ১ জোড়া ডেমু ট্রেন চলাচল করত।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারের সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি বা ক্ষুদেবার্তার উত্তর দেননি। এর আগে গত রোববার তিনি জানান,
কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে সুষ্ঠু ব্রিফিং পাওয়ার পর তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন।

বঞ্চিত হচ্ছেন যাত্রীয়া

বাংলাদেশ রেলওয়ে আন্তনগর, লোকাল, মেইল ও যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করে থাকে।

নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলাচল ও বসার জায়গার ব্যবস্থার দিক দিয়ে আন্তনগর ট্রেনগুলো সবচেয়ে ভালো সেবা দেয়। তবে এই ট্রেনে যাতায়াতের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।

লোকাল ট্রেনের ন্যূনতম ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা। এই হারটি মেইল, যাত্রীবাহী ও আন্তনগর ট্রেনের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১০, ১৫ ও ৪৫ টাকা।

অর্থাৎ, লোকাল, মেইল ও যাত্রীবাহী ট্রেন সেবা নিম্ন আয়ের মানুষের আওতার মধ্যে রয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ২ কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন রুটে ট্রেন সেবা স্থগিত হওয়ায় তাদের রাজস্ব আয় প্রভাবিত হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১৭-১৮ সালে ১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা আয় করেছে। ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ সালে তা কমে যথাক্রমে ১ হাজার ১৯৯ কোটি ও ১ হাজার ১৬৬ কোটিতে পৌঁছায়।

২০২১-২২ সালে ট্রেনের কার্যক্রম মোটামুটি স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলেও সংস্থাটির আয় করোনা মহামারির আগের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সে বছরে আয় ছিল ১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।

নেপথ্যের কারণ

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের মহা-ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বিভিন্ন রুটে ট্রেন সেবা বন্ধ থাকার জন্য কোচ ও লোকোমাস্টারের অভাবকে দায়ী করেন।

পূর্ব জোনের মহা-ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনও কিছু সেবা স্থগিতের জন্য একই ধরনের কারণের কথা উল্লেখ করেন।

২০০৮-০৯ থেকে শুরু করে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১ লাখ ৭ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের নথি অনুযায়ী, এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সংস্থাটি ৭১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন Manpower, carriage shortage in BR: 99 out of 361 trains left inoperative

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments