সুচিত্রা সেন-বন্দে আলীর জন্মভূমিতে নেই স্মৃতি ধরে রাখার উদ্যোগ

সুচিত্রা সেন-বন্দে আলীর জন্মভূমি
বন্দে আলী মিয়া (১৯০৬-১৯৭৯) ও সুচিত্রা সেন (১৯৩১-২০১৪)

আজ ১৭ জানুয়ারি। ২০১৪ সালের এই দিনে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরলোকে পাড়ি জমান উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। আবার ১৯০৬ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ১৯ শতকের অন্যতম কবি বন্দে আলী মিয়া।

তাই প্রতিবছর এই দিনে স্মরণ করা হয় ২ মহান শিল্পীকে।

বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল তার নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। সুচিত্রা সেনের শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনা শহরের হেমসাগর লেনের পৈত্রিক বাড়িতে। দেশভাগের আগে পরিবারের সঙ্গে ভারতে চলে যান সুচিত্রা সেন।

১৯৫২ সালে 'শেষ কোথায়' সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন সুচিত্রা সেন। একে একে বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে প্রায় ৬০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অভিনয় গুণাবলির জন্য তিনি একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন।

দীর্ঘ দিন অন্তরালে থাকার পর ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি সুচিত্রা সেন বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভারতের কলকাতায় এক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর পর ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই তার পৈত্রিক বাড়িটি আদালতের নির্দেশে দখলমুক্ত হয়। তারপর থেকে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

তবে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটিতে সংগ্রহশালা গড়ে না তোলায় হতাশ পাবনাবাসী।

সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদের আহ্বায়ক জাকির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুচিত্রা সেনের পাবনার বাড়িটি দখলমুক্ত করে সেখনে পরিপূর্ণ সংগ্রহশালা গড়ে তোলার জন্য পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে ঐতিহাসিক বাড়িটি দখলমুক্ত করা হলেও এখনো সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়নি।'

দেশের নানান প্রান্ত থেকে, এমনকি দেশের বাইরে থেকে অনেকে এ বাড়িটিকে দেখার জন্য আসেন। কিন্তু, হতাশ হয়ে ফিরে যান।

পাবনা জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মারুফা মনজুরি খান সৌমি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাড়িটিতে সংগ্রহশালা গড়ে তোলার পরিকল্পনা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাড়ির আশেপাশে খানিক জায়গা অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। জায়গা মাপা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।'

কবি বন্দে আলী মিয়া পাবনা শহরের নারায়ণপুরে ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে যে কয়েকজন পরিচিত নাম আছে তার মধ্যে তিনি অন্যতম। তার 'ময়নামতির চর' এখনো বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি।

গ্রামবাংলার প্রকৃতি-জীবনযাত্রা তুলে ধরে সাহিত্য রচনার পাশাপাশি কবি বন্দে আলী মিয়া শিশুসাহিত্যে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন।

শিক্ষা ও কর্মসূত্রে জীবনের প্রথম ভাগে তিনি কলকাতায় অবস্থান করেন। সেখানে আশুতোষ লাইব্রেরি থেকে ১৯২৭ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'চোর জামাই' প্রকাশিত হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার ৮৪টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

দেশভাগের পর কবি বন্দে আলী মিয়া দেশে ফিরে আসেন এবং শিল্পী-লেখক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি রাজশাহী বেতারে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে যোগ দেন। আমৃত্যু তিনি সেখানেই কাজ করেছেন।

কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পাবনার নারায়ণপুরে সমাহিত করা হয়।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও লেখক প্রফেসর আব্দুল আলিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলা সাহিত্যে কবি বন্দে আলী মিয়ার বিরাট অবদান। তিনি গ্রামবাংলার সাধারণ জীবনকে সাহিত্যের রঙ-তুলিতে জীবন্ত করে তুলেছেন।'

এক সময় পাঠ্য বইয়ে বন্দে আলীর লেখা পড়ানো হলেও এখন তা আর হয় না। প্রফেসর আলিম কবি বন্দে আলী মিয়াকে পাঠ্য বাইয়ে আবারও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

তিনি বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনক হলেও কবি বন্দে আলী মিয়ার স্মৃতি ধরে রাখতে পাবনাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মহান মানুষের স্মৃতি আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা।'

পাবনা জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মারুফা মনজুরি খান সৌমি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কবি বন্দে আলী মিয়া, মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্ম-মৃত্যু দিন সরকারিভাবে পালনের পরিকল্পনা আছে। এ নিয়ে কাজও চলছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Students to resist AL event today

The student movement against discrimination will hold a mass gathering at Zero Point in the capital’s Gulistan today, demanding trial of the Awami League.

4h ago