গোলাগুলি-অগ্নিকাণ্ডের পর ৫ দিন ধরে তুমব্রু ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গারা

নাইক্ষ্যছড়িতে কোনারপাড়া শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এসে তুমব্রু স্কুল সংলগ্ন আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে আসার পর গত ৫ দিন ধরে বাইরে অবস্থান করছে।

গত ১৮ জানুয়ারি বুধবার কোনারপাড়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় এক রোহিঙ্গা নিহত এবং অপর এক রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হন।

গোলাগুলির ঘটনার পর বিকেলে ক্যাম্পে আগুন লাগে। এতে ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর পুড়ে যায়। তখন ক্যাম্প সংলগ্ন কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ক্যাম্পের কয়েকশ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু মিয়ানমার প্রবেশ করে। এছাড়া কয়েকশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিকটবর্তী তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও তুমব্রু বাজারে আশ্রয় নেয়।

শুক্রবার মিয়ানমার প্রবেশ করা রোহিঙ্গারা আবার বাংলাদেশে এসে তুমব্রু বাজারের আশপাশে অবস্থান নেয়। ভয়ে-আতঙ্কে তারা ক্যাম্পে ফিরতে চাইছেন না।

তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আশ্রয় নেওয়া মোহাম্মদ আমিন (৪৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার আমাদের ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর আমরা কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে মিয়ানমার ভূখণ্ডে গিয়ে আশ্রয় নেই। একদিন সেখানে থাকার পর মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জোর করে আমাদের শুক্রবার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।'

নাইক্ষ্যছড়িতে কোনারপাড়া শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এসে তুমব্রু বাজারের পাশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা পরিবার। ছবি: সংগৃহীত

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজীজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শূন্যরেখার ক্যাম্পের প্রায় সব রোহিঙ্গা বর্তমানে ক্যাম্প ছেড়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের তুমব্রুতে চলে এসেছে। তারা সেখানে গত ৪ দিন ধরে অবস্থান করছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।'

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের তুমব্রু ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বুধবার ও শুক্রবার যে সব রোহিঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিদ্যালয় মাঠ ও আশপাশে আশ্রয় নিয়েছিল, তারা এখনো সেখানেই অবস্থান করছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্যাম্পে তারা আর যেতে চাচ্ছে না।'

তিনি জানান, ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসা রোহিঙ্গারা গত ৫ দিন ধরে মানবেতর দিন যাপন করছে। শনিবার এনজিও থেকে পাওয়া পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে তাঁবু তৈরি করে তারা সেখান মাঠে-বাজারে অবস্থান করছে।

রোহিঙ্গাদের অবস্থানের আশেপাশে স্থানীয়দের চলাচল সীমিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

রোববার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রোববার পাঠদান কার্যক্রম চালাতে কোনো সমস্যা হয়নি।'  

তুমব্রু বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্যাম্প থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা স্কুল ও বাজারের আশপাশে খালি জায়গায় বাঁশ-কাঠ ও ত্রিপল দিয়ে তাঁবু তৈরি করছে। আমাদের মনে হচ্ছে এখানে নতুন করে রোহিঙ্গা পল্লী হতে যাচ্ছে।' 

যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সব কথা বলা যাচ্ছে না। এতটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সীমান্ত পরিস্থিতি কঠোর নজরদারি করছে। শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে বের হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কড়া নজরদারিতে রেখেছে।'

ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে কত রোহিঙ্গা অবস্থান করছে সে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।    

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলার থেকে বাঁচতে ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। পরে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি অস্থায়ী ক্যাম্পে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়। এসব ক্যাম্পের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার। 

অপরদিকে তুমব্রু কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্ব পালন করছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট কমিটি। ক্যাম্পটিতে ৬৩০টি ঘরে প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

SWISS Banks: Funds linked to Bangladesh hit 3-year high

Bangladeshi-linked funds parked in Swiss banks surged to 589.5 million Swiss francs, or about Tk 8,800 crore, in 2024, their highest level in three years, according to data released by the Swiss National Bank (SNB) yesterday.

8h ago