ঠাকুরগাঁওয়ে তেভাগা আন্দোলনের নেতা কমরেড কম্পরাম সিংহ স্মৃতি কমপ্লেক্স উদ্বোধন 

রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ড গণহত্যায় শহিদ কমরেড কম্পরাম সিংহ স্মৃতি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁওয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন ও সাম্যবাদী কৃষক আন্দোলনের নেতা রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ড গণহত্যায় শহিদ কমরেড কম্পরাম সিংহ স্মৃতি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার বিকেলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার শালডাঙ্গা বামুনিয়া গ্রামে এই কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম।     

উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল কুমার, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজন ও শহিদ কম্পরাম সিংহের নাতি (পৌত্র) আর্শি লাল। 

উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়েছে।

বক্তারা বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, সাম্যবাদী কৃষক আন্দোলনের নেতা ও রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ড গণহত্যায় শহীদ কমরেড কম্পরাম সিংহের আত্মত্যাগ স্মরণে নির্মিত স্মৃতি কমপ্লেক্সটি শিক্ষা, গবেষণা ও সামাজিক উন্নয়ন কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হবে। 

কম্পরাম সিংহ চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় জমিদারদের স্বেচ্ছাচারমূলক তোলা (কর) আদায়ের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করেন, যা রাজনৈতিক ইতিহাসে 'তোলাবাটি' আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়। এই আন্দোলনে নেতৃত্বদানের অপরাধে তাঁকে ৩ মাস কারাভোগ করতে হয়। 

তোলাবটি আন্দোলনের পরপরই সমগ্র উত্তরবঙ্গে বর্গাচাষীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় তেভাগা আন্দোলনে সংগঠিত হলে তিনি এতেও অংশ নেন। 

তৎকালীন দিনাজপুর জেলার বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল ও আটোয়ারী থানায় এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। সরকারি হুলিয়া থাকায় ২ বছরের মতো সময় আত্মগোপন করেন তিনি।  

দেশ ভাগের পর মুসলিম লীগ শাসনামলে ১৯৪৯ সালে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। অন্যান্য কৃষক নেতাকর্মীর সঙ্গে তাঁকে রাজবন্দি হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে খাপড়া ওয়ার্ডে রাখা হয়। 

সে সময় রাজবন্দিদের ওপর মুসলিম লীগ সরকারের অত্যাচার উৎপীড়ন, রাজবন্দি ও সাধারণ বন্দিদের মানবেতর অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রাজবন্দিরা যে আন্দোলন শুরু করেন রাজশাহী কারাগারে তিনি তার নেতৃত্ব দেন। 

আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ৮ জন রাজবন্দীকে কনডেমড সেল বা ফাঁসির আসামির নির্জন সেলে আটকে রাখলে তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বন্দীরা। তাঁদের খাপরা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানে তাদের ওপর নির্মমভাবে গুলি ছোঁড়ে কারারক্ষীরা। এতে ঘটনাস্থলেই ৬ জন শহীদ হন। আহত হন কমরেড কম্পরাম সিংহসহ আরও অনেকে।

১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে কারারক্ষীদের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এটিই বাংলাদেশের প্রথম জেল হত্যা।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago