সিরাজগঞ্জে হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতার খোঁজে গবেষক দল

সিরাজগঞ্জে হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতার খোঁজে গবেষক দল
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের ক্ষীরিতলা গ্রামটি ঘুরে দেখলে একটি নিভৃত পল্লী ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। অথচ হাজার বছর আগের সভ্যতার নিদর্শনের কিছু ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামেও।

ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করে এবং হারিয়ে যাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো খুঁজে বের করতে গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণার কাজ করেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল।

গবেষণায় ইতোমধ্যে সেখানে ১৪টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের সন্ধান পাওয়া গেছে।

ধ্বংসপ্রাপ্ত এসব প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা থেকে অষ্টম শতাব্দীর পাল সাম্রাজ্যের পুরাকীর্তির নিদর্শনের কাছাকাছি বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পেয়েছে গবেষক দল।

প্রাথমিক গবেষণায় ওই এলাকাগুলোতে বিস্তর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ইঙ্গিত পাওয়ায়, গবেষক দল গত শনিবার থেকে নতুন এলাকা অনুসন্ধানে আবারও মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

ছবি: স্টার

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রত্নতত্ত্ববিদ রিফাত-উর-রহমানের নেতৃত্বে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত অনুসন্ধান দল ক্ষীরিতলার প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ থেকে বিভিন্ন নিদর্শন এবং তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ করছে।

প্রত্নতত্ত্ববিদ আবুল কালাম মোহাম্মেদ জাকারিয়া রচিত 'বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ' বইয়ে সিরাজগঞ্জের এ অঞ্চলে গুপ্ত সাম্রাজ্য পরবর্তী এবং পাল সাম্রাজ্যের সময়কালের সভ্যতার বর্ণনা পাওয়া যায়।

রায়গঞ্জ উপজেলার ক্ষীরিতলা, নীমগাছি, ভুয়টসহ বিশাল এলাকা জুড়ে প্রাচীন সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থাপনার নিদর্শন পাওয়া যায়। কালের বিবর্তনে এলাকার মানুষের অসচেতনতায় বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনার তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই।

সরেজমিনে এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বছরের পর বছর ধরে স্থানীয়রা এসব প্রাচীন স্থাপনা ভেঙে পুরোনো ইট দিয়েই গড়ে তুলেছেন নিজেদের বাড়িঘর। প্রাচীন সভ্যতা ধ্বংস করে স্থানীয়রা নিজেদের প্রয়োজন মতো ব্যবহার করছেন।

গবেষক রিফাত-উর-রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৮ সাল থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে রায়গঞ্জ উপজেলার প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসন্ধানে গবেষণা চালানো হচ্ছে। গত ৫ বছরে ১৪টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খুঁজে বের করা হয়েছে এবং সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি সাইট উন্মোচন করা হয়েছে।'

এসব স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ প্রাচীন টেরাকোটার কাজ, প্রাচীন ইট, বিভিন্ন ধরনের স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান রিফাত-উর-রহমান।

তিনি আরও জানান, সংগ্রহকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রাচীন পাল সাম্রাজ্যের অষ্টম শতকের বলে প্রাথমিক গবেষণায় অনুমান করা হচ্ছে। তবে পরিপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা করা ছাড়া সঠিক সময়কাল জানা সম্ভব নয়।

চিহ্নিত এসব স্থানগুলোর ডকুমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ম্যাপ (জিআইএস ম্যাপ) তৈরি করা হচ্ছে।

এই গবেষক জানান, মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করার পর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে খনন কাজ শুরু হবে। খনন করা সম্ভব হলে মাটির নিচ থেকেও প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যেতে পারে।

অনুসন্ধান দলে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে শিক্ষার পাশাপাশি জীবনের একটি বড় অর্জন বলে মনে করছেন এতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও অনুসন্ধান দলের সদস্য শামিম হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাচীন সভ্যতার বেশিরভাগ স্থাপনা ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে এখনো যে ধ্বংসাবশেষ আছে, তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে ভবিষ্যতের অনুসন্ধান কাজ অনেক এগিয়ে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials end strike after govt warning

Following a stern government warning and mounting pressure from the country’s top business leaders, officials of the National Board of Revenue have withdrawn their shutdown.

4h ago