ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্পূর্ণ স্বাধীন হওয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।
তিনি বলেন, 'আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। আমি সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি।'
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে তার দল দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, 'আমি কখনোই ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সবসময় জনগণের খাদ্য ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন।
তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো সংসদে ইসির পুনর্গঠন আইন পাস হয় এবং তারপর সেই আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন এবং এর প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ভিত্তি নেই। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম তো ক্যান্টনমেন্টে হয়েছে।
সামাজিক অর্থনৈতিক বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয়ে আলোকপাত করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের আমলে বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশের এই পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে অব্যাহত গণতান্ত্রিক চর্চা ও স্থিতিশীলতার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।
আলোচনায় রুশ-ইউক্রেইন যুদ্ধ ও রোহিঙ্গা ইস্যুও স্থান পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের উচিত এই যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া। কারণ এর ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, 'যুদ্ধ কখনোই মানবজাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।'
যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে এই বিরোধের মীমাংসা হতে পারে।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এবং মিয়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক নাগরিক আসার কারণে স্থানীয়রা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মাদক পাচার, মানব পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃসহিংসতার মতো নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যূত নাগরিকরা পাঁচ বছর ধরে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের কারণে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয়দের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে আর তাই এখন তাদের সেখানে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, তার সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নত জীবন যাত্রা নিশ্চিত করতে আয়সংস্থানমূলক কাজসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। তিনি ভাসানচরে সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।
এ সময় শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও অনুকূল পরিবেশে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় ডেরেক শোলেট প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই বাস্তুচ্যূত জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের জন্য তারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, মিয়ানমারে আবার কোনো গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তার সফর দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতিফলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
তিনি দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ব্যাপারে আশাবাদী।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শোলেট ২৪ ঘণ্টার সফরে মঙ্গলবার বাংলাদেশে পৌঁছান।
Comments