‘আক্রান্ত’ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি জানিয়ে ৩০ নাগরিকের বিবৃতি

শুক্রবারের হামলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আক্রান্ত একটি ঘর। ছবি: স্টার

পঞ্চগড়ের আহম্মদ নগরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৩০ নাগরিক।

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ধর্মাশ্রয়ী নীতি সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের জন্য দায়ী।

আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠোনো এই বিবৃতিতে বলা হয়, পঞ্চগড়ের আহমদ নগরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বসতিতে হামলা চালিয়ে বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে পরের দিন আবারও পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন ও বিক্ষুব্ধ।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'পঞ্চগড়ের এই আক্রমণের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ২০১৯ সালেও এমনইভাবে আহমদিয়া সম্প্রদায় আক্রান্ত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সাংবিধানিক নীতি এবং ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য না করা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।'

বিবৃতিদাতাদের অভিমত, 'শুধু আহমদিয়া সম্প্রদায়ই নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় বা ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তি-জনগোষ্ঠী একইভাবে উগ্র ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের আক্রমণ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। কিন্তু রাষ্ট্র এই আক্রমণ বন্ধ কিংবা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে বরাবরই নিস্ক্রিয় থাকছে। রাষ্ট্রের এই নিষক্রিয়তা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টিসহ  বাংলাদেশকে ক্রমশ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বীর জন্য ভীতিকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে, যা জনযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতিকে কলঙ্কিত করছে।'

একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রের অধিক গুরুত্ব প্রদান এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থার অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসনেও নিস্ক্রিয় থাকার মতো বিষয়টি দেশে ধর্ম ও জাতিগত নিপীড়ন প্রবণতার সৃষ্টির জন্য দায়ী বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিদাতাদের ভাষ্য, 'রাষ্ট্র ও রাজনীতির ধর্মাশ্রয়ী নীতি প্রতিটি সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের জন্য দায়ী। আহমদিয়া সম্প্রদায় কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠীর ওপর ইতোপূর্বে সংঘটিত নিপীড়নের ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হলে স্বাধীনতার মাসে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।

'ঘটনা পরবর্তী সময়ে তদন্ত কমিটি গঠন ও ঘটনাস্থলে কয়েক দিনের পুলিশী পাহাড়া বসিয়ে রাষ্ট্রীয় দায় শেষ করার বিপরীতে রাষ্ট্রকে কঠোর নীতি অনুসরণ করতে হবে। সকল ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র তথা সরকারকে ধর্মবোধের রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়ে কঠোরতার সাথে ধর্মীয় উগ্রতা ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে হবে।'

এই বিবৃতির মাধ্যমে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতি জানিয়ে কয়েকটি দাবিও জানানো হয়। এগুলো হলো- 'প্রতিটি সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ'- এ বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করা, প্রতিটি ঘটনায় সংসদীয় তদন্ত কমিশন এবং স্বাধীন গণতদন্ত কমিশন গঠনের বাধ্যবাধকতা প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়ন করা, সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের ঘটনার বিচারে সব মামলা দ্রুত বিচার আইনে এবং সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে নিস্পত্তি করা ও এ যাবৎকালে সংঘটিত সব সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের বিচার করা এবং পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বসতিতে হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা এবং সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে এর তদন্ত করে বিবৃতি প্রকাশ করা।

বিবৃতিতে স্বাকরকারীরা হলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব, ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস এম এ সবুর, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তবারক হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ ও রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য রনজিৎ কুমার সাহা, এএলআরডি'র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হাসেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জোবায়দা নাসরিন, গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী ড. সেলু বাসিত, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতি কর্মী এ কে আজাদ, খেলাঘর'র সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, সমাজকর্মী জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, সংস্কৃতি কর্মী অলক দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, সংস্কৃতি মঞ্চের আহ্বায়ক সেলিম রেজা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) সভাপতি গৌতম শীল।

 

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

5h ago