নগরবাড়ি নদীবন্দর নির্মাণ প্রকল্প

৩ বছরের প্রকল্প ৫ বছরেও শেষ হয়নি, আরও ২ বছর বাড়ানোর আবেদন

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুনর্নির্ধারিত মেয়াদেও কাজ শেষ না করতে পারায় এবার প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় বাড়ানোরও আবেদন করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)।
নগরবাড়ি নদীবন্দর
পাবনার নগরবাড়িতে আধুনিক নদীবন্দর নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিআইডাব্লিউটিএ। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

উত্তরাঞ্চলে নৌপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা বাড়াতে পাবনার নগরবাড়িতে যে আধুনিক নদীবন্দর নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার, তার মেয়াদ ও ব্যয় আবারও বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৮ সালে ৫১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনার পাড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করে সরকার। ৩ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প শুরুতেই ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা জটিলতায় পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুনর্নির্ধারিত মেয়াদেও কাজ শেষ না করতে পারায় এবার প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় বাড়ানোরও আবেদন করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)।

নগরবাড়ি নদীবন্দর
নগরবাড়িতে নদীবন্দর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যমুনার পাড়ে বিশাল এলাকাজুড়ে ইট-লোহা-বালুসহ নানান নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বন্দরসংশ্লিষ্টরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ চলতে থাকায় এখানে আমদানি পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে।

নগরবাড়ি ঘাট এলাকার আমদানিকারক নওয়াপাড়া গ্রুপের প্রতিনিধি মো. আরমান হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের আমদানি করা সার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহের জন্য নগরবাড়ি ঘাটে নিয়ে আসা হয়। এখানে নির্মাণকাজ চলতে থাকায় এবং নদীতে পর্যাপ্ত নাব্যতা না থাকায় এখন বেশিরভাগ পণ্য যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে আনলোড করা হচ্ছে।'

নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এ বন্দরে বড় জাহাজ নিয়ে এসে পণ্য খালাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানান আরমান।

দেশ ট্রেডিং-এর প্রতিনিধি মো. রাজিব হোসেনের ভাষ্য, নগরবাড়ি বন্দর থেকে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলায় সার, কয়লা, পাথর ও অন্যান্য আমদানি পণ্য সরবরাহ করা অনেক সহজ।

নগরবাড়ি নদীবন্দর
নগরবাড়িতে নদীবন্দর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নিজেদের জাহাজে করে নগরবাড়ি ঘাটে সরাসরি পণ্য নিয়ে আসা যায়। এখান থেকে তা সড়কপথে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় সহজেই পরিবহন করা যায়। বর্তমানে আমদানি পণ্যের একটি বড় অংশ দক্ষিণের জেলাগুলোয় খালাস করা হচ্ছে। ফলে উত্তরাঞ্চলে পরিবহনে সময়ের সঙ্গে ট্রাকপ্রতি খরচও বাড়ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।'

নগরবাড়ি নদীবন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রফিক উল্লাহ ডেইলি স্টারকে জানান, আগে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন বন্দরে প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হত। ৮-১০টি জাহাজ পণ্য নিয়ে আসত। কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ এখানে করত।

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার ব্যাখ্যায় প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজিম উদ্দিন পাঠান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনা মহামারির কারণে কাজে ধীরগতি আর প্রকল্প এলাকায় দীর্ঘমেয়াদে বর্ষার পানি জমে থাকায় সময়মতো কাজ শেষ করা যায়নি। তাই আবারও প্রকল্পের সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পের ব্যয় পুনর্নির্ধারণের জন্য কারিগরি কমিটি কাজ করছে।'

নগরবাড়ি নদীবন্দর
যমুনার পাড়ে বিশাল এলাকাজুড়ে ইট-লোহা-বালুসহ নানান নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

নির্বাহী প্রকৌশলীর ভাষ্য, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

বন্দর কর্মকর্তা মো. ওয়াকিল জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নদীবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। ইতোমধ্যে নদীপাড়ের বিভিন্ন স্থাপনার কাজ শেষ হয়েছে। তবে জেটি নির্মাণের কাজ এখনো বাকি।

তিনি বলেন, 'পুরো কাজ শেষ হলে নগরবাড়িতে একসঙ্গে ১০টি জাহাজ পণ্য খালাস করতে পারবে। এখানে অটোমেশন সুবিধা থাকবে। ফলে পণ্য খালাসে গতি বাড়বে।'

Comments