২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র

নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধী দলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম হয়েছে।

'দ্য ২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিস' গতকাল সোমবার রাতে প্রকাশিত হয়েছে।

ওয়াশিংটন সম্প্রতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বারবার বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। এ বছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

বার্ষিক কান্ট্রি রিপোর্টগুলো ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলে মানবাধিকার ও কর্মীদের অধিকারের প্রতি সম্মানের পরিস্থিতি নথিভুক্ত করে।

প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'আরও নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বিশ্ব তৈরি করতে ব্যক্তিগত অধিকারের প্রতি সম্মানের প্রচার সহায়তা করে৷'

তিনি বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকার বিষয়গুলো উত্থাপন করে। আমরা এটি চালিয়ে যাব।'

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ এবং তার নির্বাচনী জোট ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয় লাভ করেছে। যেখানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার নির্বাচনী জোট জয়ী হয়েছে ৭টি আসনে।

নির্বাচনের আগে প্রচারণার সময় হয়রানি, ভয় দেখানো, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও সহিংসতার অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন ছিল। এর ফলে অনেক বিরোধী দলীয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটারদের সঙ্গে দেখা করা, সমাবেশ করা বা অবাধে প্রচারণা চালানো কঠিন হয়ে উঠেছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ২২টি নির্বাচনী ওয়ার্কিং গ্রুপ এনজিওর মধ্যে মাত্র ৭টিকে অনুমোদন দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ও নির্বাচন কমিশন।

২০২২ সালের বেশ কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে চিহ্নিত করা হয়েছে কম ভোটার উপস্থিতি, ভয় দেখানো, অনিয়ম এবং প্রচারণা ও ভোটদানের সময় সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র উল্লেখ করেছে, এসব নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৭৯টি ঘটনা ঘটেছে এবং ৭০ জন নিহত হয়েছেন।

মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনে মামলা করেছে।

বিএনপি দাবি করেছে, পুলিশ ১ বছরে হাজারো বিএনপি সদস্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে ফৌজদারি মামলা করেছে এবং গ্রেপ্তার করেছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা দাবি করেছেন, এসব অভিযোগের বেশিরভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বিরোধী দলের সংশ্লিষ্টদের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

প্রতিবেদনে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার, সমাবেশের স্বাধীনতা, অভিবাসী ও শরণার্থীদের অধিকারসহ আরও কিছু সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, অনলাইন ও অফলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। হয়রানি ও প্রতিশোধের ভয়ে মিডিয়া ও ব্লগাররা সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্রে সেলফ সেন্সর করছে।

গত বছর জুড়ে করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের পরিচালনা বিষয়ে প্রশ্ন তোলাসহ সরকারের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে সরকার।

আইনটি ক্রমবর্ধমানভাবে দেশের বাইরে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়েছিল।

গত এপ্রিলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ অব বাংলাদেশ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮৯০টি মামলায় অন্তত ২ হাজার ২৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রাজনীতিবিদ এবং এরপরেই আছেন সাংবাদিক।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে প্রতি মাসে গড়ে ৩২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ২০২১ সালের তুলনায় নাটকীয়ভাবে কমেছে।

Comments

The Daily Star  | English

CEC urges officials to ensure neutrality as polls preparations advance

He reiterates that the commission is advancing steadily with election preparations

26m ago