প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া হবে দেশে তৈরি প্রথম ‘কলাবতী শাড়ি’

‘১ কেজি সুতা দিয়ে ১০ দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে লম্বায় সাড়ে ১৩ হাত বাই আড়াই হাত শাড়িটি তৈরি হয়েছে।’
রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে কলাগাছের আঁশ বা তন্তুকে প্রক্রিয়াজাত করে সুতা থেকে তৈরি ‘কলাবতী শাড়ি’ নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী। ছবি: সংগৃহীত

কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি প্রথম কলাবতী শাড়ি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়া হবে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী।

আজ রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে কলাগাছের আঁশ বা তন্তুকে প্রক্রিয়াজাত করে সুতা থেকে তৈরি 'কলাবতী শাড়ি' নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।

শাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, '১ কেজি সুতা দিয়ে ১০ দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে লম্বায় সাড়ে ১৩ হাত বাই আড়াই হাত শাড়িটি তৈরি হয়েছে।'

শাড়িটি উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা করেছেন মৌলভীবাজারের রাধাবতী দেবী।

এই সুতা নিয়ে গবেষণা করে আরও মসৃণ, নরম ও হালকা করা গেলে ৫০০ গ্রাম থেকে ৭৫০ গ্রাম সুতা দিয়ে একটি শাড়ি তৈরি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শ্রম ও সময় কম লাগবে। তখন এই শাড়ির বাজারমূল্য ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

তিনি আরও বলেন, 'শুধু শাড়ি নয়, কলাগাছের সুতা থেকে পর্দা, ব্যাগ, পাপোস, জুতা, হাতব্যাগ, কলমদানি তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ ঘর সাজানোর জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র শৈল্পিক রূপ দিয়ে কীভাবে তৈরি করা যায় সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে সুতা পাঠানো হবে।'

এছাড়া হাতের বালা, গলার হার, কানের দুলসহ বিভিন্ন আধুনিক অলংকার কীভাবে তৈরি করা যায় সেই চেষ্টাও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। 

পাহাড়ী নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে এই কলাগাছের আঁশ বা তন্তু থেকে প্রক্রিয়াজাত সুতা অগ্রনী ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রশিক্ষিত নারীরা বান্দরবানের ৭ উপজেলার নারীদের সুতা বানানো, সুতা শুকানো, সুতা যাচাই-বাছাইসহ বিভিন্ন কাজে প্রশিক্ষণ দিলে অনেক নারী অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠবেন।'

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, 'গত ডিসি সম্মেলনে স্থানীয় পণ্যগুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই চিন্তা থেকেই কলাবতী শাড়ি তৈরি করা হয়।'

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি চলে গেলেও কার্যক্রম চলমান থাকবে। কারণ এখানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের বিভিন্ন নারী গ্রুপ যুক্ত আছেন। গ্রাউস, ওয়ার্ল্ড ভিশনসহ বিভিন্ন এনজিও যুক্ত হয়েছে।'

কলাগাছের বাঁকল, আঁশ বা তন্তু থেকে সুতা এবং সুতা থেকে শাড়ি এর আগে কেউ দেখেননি বলে জানা গেছে। সে দিক থেকে এখন পর্যন্ত বলা যায়, এটিই বাংলাদেশে তৈরি প্রথম কলাগাছের সুতার শাড়ি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক লুৎফুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুরাইয়া আক্তার সুইটি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, এনডিসি শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার বিশ্বাস, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী, তাঁত শিল্পী রাধাবতী দেবী, সাইং সাইং উ নিনিসহ আরও অনেকে।

Comments