কুয়াকাটা সৈকতে উচ্ছেদের ৪ মাসের মধ্যেই আবার অবৈধ স্থাপনা

কুয়াকাটা সৈকতে গত নভেম্বরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর সম্প্রতি এসব স্থানে আবারও স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়েছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছরের নভেম্বরে কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় ৬০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু উচ্ছেদের ৪ মাসের মধ্যে আবার সৈকতের বিভিন্ন এলাকায় খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়েছে।  

গত ২ সপ্তাহ ধরে সৈকতের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে ২ শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে এবং এখনো আরও কিছু স্থাপনা নির্মাণাধীন।

কুয়াকাটা সৈকতকে নিজেদের জমি দাবি করে একটি চক্র ১৯৭৫ সালে আদালতে একটি মামলা করে। মামলার পর তারা সৈকতে শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করে। এর বাইরেও কয়েকজন প্রভাবশালী বিভিন্ন সময়ে স্থাপনা নির্মাণ করে সৈকতের বেশ কিছু জায়গা দখল করে। 

গত বছরের নভেম্বর ওই মামলাটি খারিজ হলে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ১০-১২ নভেম্বর ৩ দিন পৃথক অভিযান চালিয়ে সৈকত থেকে প্রায় ৬০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের জিরো পয়েন্টের পশ্চিম পাশের সৈকতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে।  

সৈকত এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে পৌরসভা, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম থাকলেও, এক্ষেত্রে কিছুই মানা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। 

ওই জমির মালিকানা দাবি করা সাজেদুল ইসলামের ওই নির্মাণকাজের তদারকির কাজ করছেন তার শ্বশুর এ কে এম শাহজালাল। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ জমি নিয়ে আদালতের আদেশ আছে আমাদের পক্ষে। তাই এখানে আমরা নির্মাণকাজ করছি।'  

এদিকে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের পূর্ব দিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে গঙ্গামতি পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার জায়গা থেকে ৩ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও এখন আবার সেখানে এখন আবার স্থাপনা তৈরি করে দখলে নিচ্ছে স্থানীয়রা।

নতুন করে সেখানে ঘর তুলছেন কোহিনুর বেগম। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্বামী সাগরে মাছ ধরে ৫ সদস্যের সংসার চালায়। কয়েক মাস আগে আমাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের জায়গা-জমি নেই, তাই ঝুপড়ি ঘর তুলে এখানেই থাকছি।'

স্থানীয় আলম গাজীও সেখানে ঘর তুলছেন। তিনি বলেন, 'বাপ-দাদার সময় থেকেই আমরা এখানে আছি। আমার কোনো জায়গা নেই। তাই কষ্ট হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে আছি। কিন্তু আমাদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করা হলে এখান থেকে চলে যাব।'

জানতে চাইলে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, কুয়াকাটাকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে গত নভেম্বরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের অবৈধ স্থাপনাগুলো অপসারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের পুনর্বাসন না করায়, অনেক পরিবার সেখানেই রয়ে গেছে।

তিনি জানান, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কুয়াকাটায় একটি মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যেন আগত পর্যটকরা এক জায়গা থেকেই সব ধরনের কেনাকাটা করার সুযোগ পান। এছাড়াও উচ্ছেদকৃতদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন অলীদ ডেইলি স্টারকে জানান, উচ্ছেদকৃত জায়গায় আবার স্থাপনা উত্তোলন করলে সেগুলো ভেঙে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুয়াকাটায় উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে আমরা কাজ করছি। এখানকার পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে কুয়াকাটায় যত্রতত্র এবং অপরিকল্পিত স্থাপনাগুলোকে সরিয়ে ফেলা হবে।'

কুয়াকাটা সৈকতে আবাসিক হোটেল সি কুইনের নির্মাণাধীন একটি নতুন আধাপাকা স্থাপনা সম্প্রতি অপসারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
 

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

6h ago