‘নিখোঁজ’ মাইকেল চাকমার সন্ধান দাবিতে বিক্ষোভ

মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্টের সামনে শিক্ষা অধিকার চত্বরে পৌঁছলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়। 
মাইকেল চাকমা নিখোঁজের ৪ বছর উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪ সংগঠন আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

ইউপিডিএফের 'নিখোঁজ' নেতা মাইকেল চাকমার সন্ধান চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪ সংগঠন। মাইকেল চাকমা 'নিখোঁজের' ৪ বছর উপলক্ষে আজ রোববার সকালে ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল ও রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে তারা। 

সংগঠনগুলো হলো-ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ), বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)।

৪ বছরে মাইকেল চাকমার সন্ধান না পাওয়ায় সমাবেশে বক্তারা নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অবিলম্বে তার সন্ধানের দাবি জানান। 

এছাড়া, বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে গত শুক্রবার 'বন্দুকযুদ্ধে' বম জাতির ৮ গ্রামবাসী নিহতের ঘটনাকে 'ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা' অভিযোগ তুলে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।

সমাবেশে শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্টের সামনে শিক্ষা অধিকার চত্বরে পৌঁছলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়। 

এ সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোতে চাইলে পুলিশ সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়। প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর সেখান থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে মিছিলটি শেষ হয়।

মিছিলটি হাইকোর্টের সামনে পৌঁছলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়। ছবি: সংগৃহীত

ইউডব্লিউডিএফের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য বেলাল চৌধূরী, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিপ্লব ভট্টাচার্য, মায়ের ডাকের আহ্বায়ক ও 'গুম' হওয়া সুমনের বড় বোন আফরোজা ইসলাম আখি, গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ছায়দুল হক নিশান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা।

এতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন লেখক রেহেনুমা আহম্মেদ, লেখক ও অনুবাদক ওমর তারেক চৌধূরী, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটভূক্ত ছাত্র সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দীলিপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রগতি বর্মন তমা। 

আরও সংহতি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার হারুনুর রশিদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটভুক্ত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নজির আহম্মেদ জয়, বাংলাদেশ ছাত্র-যুব আন্দোলনের তাওফিকা প্রিয়া প্রমুখ।

সমাবেশে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, 'মাইকেল চাকমাকে ফিরে পেতে সংগঠনগুলো মানবাধিকার কমিশনসহ সরকারের সব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। পুলিশ প্রথম দিকে মাইকেল চাকমার সন্ধানে কাজ করলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।'

তিনি বলেন, 'সরকার বিরোধী মত ও দল দমনের জন্য গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, আটক অবস্থায় নির্যাতন, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা দিয়ে জনগণের কণ্ঠস্বর দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে চেপে রাখার চেষ্টা করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'মাইকেল চাকমাকে গুম করার কারণ তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সব জাতিসত্তার জনগণ, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন।'

'আজ মাইকেল চাকমা গুমের শিকার। তার বাবা তাকে দেখতে না পেয়ে মারা গেছেন। তার বোন কোনোদিন রাজধানী ঢাকায় আসেননি, তিনি ঢাকায় এসে মাইকেল চাকমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ এই নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুক্তি চায়। এই মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে প্রতিরোধ,' বলেন ফয়জুল হাকিম।

'রোয়াংছড়িতে বম জাতিসত্তার ৮ জন নিহতের ঘটনা পরিকল্পিত' উল্লেখ করে পিসিপি নেতা অঙ্কন চাকমা বলেন, 'রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে রোয়াংছড়িতে বম জাতিসত্তার ৮ গ্রামবাসীকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে।'

তিনি বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের আগে সন্ত্রাসীরা প্রথমে বমদের গ্রাম ঘেরাও করে ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। সেখান থেকে ২২ জন বমকে অপহরণ করে। পরে ১৫ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকিদের "দুই পক্ষের গোলাগুলিতে" নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে এ ঘটনায় নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাই।'

নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা নেতা বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, 'আমরা ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে মাইকেল চাকমাকে খোঁজ করেছিলাম। আজ ৪ বছরেও তার খোঁজ আমরা পাইনি। এর আগে ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। তারও আগে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে গুম করা হয়েছিল।'

পার্বত্য চট্টগ্রামের সত্য ঘটনাগুলো আড়াল করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'দেশের পত্রিকাগুলো মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে সেখানকার সত্যকে আড়াল করে রাখে। যাদের সম্ভাবনাময় মনে করা হয় তাদের টার্গেট কিলিং করা হয়।'

Comments