ভেসে আসা মৃত তিমিটি মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে

মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কক্সবাজার সৈকতের হিমছড়ি থেকে দরিয়ানগর পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকার অন্তত ১ কিলোমিটার দূরে সাগরে মৃত তিমিটি ভাসতে দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার সাগরে ১০ ঘণ্টা ভেসে থাকার পর বালিয়াড়িতে এসে আটকা পড়েছে বিশাল আকৃতির মৃত তিমিটি। পচে মারাত্মক দূর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে তিমিটিকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বুরি) বিজ্ঞানীরা ড্রোনের মাধ্যমে ছবি ও ফুটেজ সংগ্রহ করেন। রাতে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে নমুনাও সংগ্রহ করেছেন তারা।

সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিমিটির লেজের অংশ পঁচে গেছে। পরিমাপ করে দেখা গেছে তিমিটি ৪০ ফুটের বেশি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, জেলেদের জালে আটকা পড়ে তিমিটির মৃত্যু হয়েছে।'

বালিয়াড়িতে আটকে পড়া তিমিটি বিশাল আকৃতির হওয়ায় অন্য কোথাও সরানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার শামীম।

তিনি বলেন, 'তিমিটি বিশাল আকৃতির হওয়ায় কোনোভাবেই অন্য কোথাও সরানো যায়নি। মৃত তিমিটি থেকে প্রচন্ড দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ক্রেন এনে বালিয়াড়িতে ১০ থেকে ১২ ফুট গভীরের বিশাল গর্ত করে তিমিটিকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।'

জানা গেছে, ভেসে আসা মৃত তিমিটি ব্রাইডস জাতের। এর বৈজ্ঞানিক নাম বেলিনিওপেট্রা ইডিনি।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মোহাম্মদ বেলাল হায়দর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এর আগে ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল দুটি তিমি হিমছড়ির ঠিক একই পয়েন্টে ভেসে এসেছিল। যে দুটি তিমি গত বছর ভেসে এসেছিল সেগুলোও বেলিনিওপেট্রা ইডিনি প্রজাতির তিমি ছিল। আমরা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত হয়েছিলাম।'

ভেসে আসা মৃত তিমি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'তিমিটির শরীরে পঁচন ধরে র্দূগন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই ধারণা করা যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন আগেই গভীর সমুদ্রে তিমিটির মৃত্যু হয়েছে। তিমিটির শরীরে জালের বিশাল রশি পেঁচিয়ে আছে। মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করছি, মাছ ধরার বিশাল জালে আটকা পড়ে এবং গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে তিমিটি মারা গেছে।'

'তিমি সাধারণত মৎস্য শিকারীদের জালে আটকা পড়ে, জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে কিংবা সমুদ্র শব্দ দূষণের কারণে পরষ্পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে উপকূলের অগভীর জলে এসে আটকা পড়ে মারা যায়। এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটি খুব সংবেদনশীল, কখনো কখনো সঙ্গীর মৃত্যু হলেও এদেরকে সাগরের অগভীর জলে আত্মহুতি দিতেও দেখা যায়। এ প্রজাতির তিমির দাঁত নেই। মুখের মধ্যে চিরুনির মতো একটি অংশ দিয়ে তারা খাবার প্রক্রিয়াজাত করে,' বলেন তিনি।

সাঈদ মোহাম্মদ বেলাল হায়দর আরও বলেন, 'তিমির বিচরণের জন্য গভীর ও ঈষৎ উষ্ণ জলের প্রয়োজন। তাই ভারত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে তিমির বিচরনের সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হিসেবে মনে করা হয়। এরা কখনো কখনো একাকী, কখনো যুগলবন্দী কিংবা দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উত্তর প্রান্ত ও এর আশপাশের এলাকা, কক্সবাজারের পশ্চিমে এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণের গভীর সমুদ্রেও ব্রাইডস প্রজাতির তিমির দেখা পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এ তিমির প্রজননক্ষম একটি বড় কলোনি বঙ্গোপসাগরের গভীরে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড ও এর আশপাশের এলাকাজুড়ে বসবাস করছে। এ বিষয়ে আরও নিবিড় গবেষণা প্রয়োজন।'

গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কক্সবাজার সৈকতের হিমছড়ি থেকে দরিয়ানগর পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকার অন্তত ১ কিলোমিটার দূরে সাগরে মৃত তিমিটি ভাসতে দেখা যায়। তিমির গায়ে পেঁচানো ছিল মাছ ধরার জাল, শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন।

প্রায় ২৫ টন ওজনের বিশাল তিমিটি দেখার জন্য গভীর রাতেও ভিড় করেন অনেকে।

কলাতলীর বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, 'তিমি ভেসে উঠেছে শুনে দুই মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সাধারণত বই কিংবা টেলিভিশনে তিমি দেখেছি, আজ জীবনে প্রথমবার তিমি দেখলাম। তিমিটি অনেক বড়, দেখতে প্লেনের মতো লাগছিল।'

কক্সবাজারে ঘুরতে আসা পর্যটক তাফপিয়া বলেন, 'রাতে সৈকতে হাঁটতে গিয়ে উৎসুক জনতার ভিড় দেখি। কাছে গিয়ে দেখতে পাই বিশাল আকৃতির একটি তিমি। মনে হয়েছে, জালে আটকে তিমিটি মারা গেছে। এই সামুদ্রিক প্রাণী অনেক উপকারী, তাকে এভাবে মেরে ফেলাটা উচিত হয়নি। খুবই খারাপ লাগছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Humanitarian corridor: 'First get guarantee for Rohingya return'

'The interim government has agreed in principle to allow a humanitarian corridor under UN supervision with certain conditions'

11h ago