দিনমজুর জয়নালের পাঠাগার ছড়াচ্ছে শিক্ষার আলো

ইটভাটায় কাজের ফাঁকে একাকিত্ব জীবনের সঙ্গী হিসেবে বইকে বেছে নেন তিনি। কাজের পর অবসরে বই পড়া শুরু করেন।
‘সাতভিটা গ্রন্থনীড়’ প্রতিদিন শতাধিক পাঠকের সমাগমে মুখরিত থাকে। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

একদিন দিনমজুরি না করলে উপোষ থাকতে হয় জয়নাল আবেদীন ও তার পরিবারকে। কিন্তু বই পড়ার নেশা তার নিত্যদিনের। তাইতো গ্রামে তিনি পরিচিত 'বই পাগল দিনমজুর' হিসেবে।

বই পড়ার নেশা থেকেই তিনি গ্রামে স্থাপন করেছেন একটি পাঠাগার। তার প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার 'সাতভিটা গ্রন্থনীড়' গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী পশ্চিম সাতভিটা গ্রামের দিনমজুর জয়নাল চরম দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করেও শিক্ষার প্রদীপ হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন জয়নাল। ২০০২ সালে বাবা কাসেম আলী মারা গেলে তিনি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ইটভাটায় কাজের ফাঁকে একাকিত্ব জীবনের সঙ্গী হিসেবে বইকে বেছে নেন তিনি। কাজের পর অবসরে বই পড়া শুরু করেন।

ইটভাটায় কাজ করে যে টাকা আয় করতেন, সেখান থেকেই কিছু টাকা জমিয়ে কিনতেন বই। ১৪ বছরে তিনি ৩০০ বেশি বই কিনেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের উপন্যাস ও জীবনী।

২০১৬ সালে জয়নাল ইটভাটার কাজ ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। নিজের জমানো ২০ হাজার টাকা দিয়ে গ্রামে এক শতাংশ জমি কিনে সেখানে টিনশেড ঘর তোলেন এবং গড়ে তোলেন 'সাতভিটা গ্রন্থনীড়'। তার কেনা ৩০০ বই ঠাঁই পায় পাঠাগারটিতে। বর্তমানে পাঠাগারটিতে ৩ হাজার ৭০০ বই রয়েছে। ২০২২ সালে সরকারি অনুদানে পাঠাগারটির জন্য ভবন নির্মাণ করা হয়।

পশ্চিম সাতভিটাসহ আশপাশের গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গ্রামের মানুষ নিয়মিত পাঠাগারে আসেন এবং বই পড়েন। তারা পছন্দমতো বই পড়ার জন্য বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন। 'সাতভিটা গ্রন্থনীড়' পরিণত হয়েছে জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রে। প্রতিদিন শতাধিক পাঠকের সমাগমে মুখরিত থাকে পাঠাগারটি।

জয়নাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বই পড়ার নেশা থেকেই আমি পাঠাগারটি স্থাপন করি। ইটভাটায় কাজ করার সময় থেকেই বই পড়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছি। এখন প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা বই পড়ি। কোনো সময় কাজের ব্যস্ততায় বই পড়ার সুযোগ না পেলে কষ্ট লাগে।'

ইটভাটায় কাজের ফাঁকে একাকিত্ব জীবনের সঙ্গী হিসেবে বইকে বেছে নেন তিনি। কাজের পর অবসরে বই পড়া শুরু করেন।
‘সাতভিটা গ্রন্থনীড়’ ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

তিনি বলেন, 'আমাদের গ্রামটি অনুন্নত। গ্রামের মানুষদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করতেই পাঠাগারটি স্থাপন করি। কারণ, বই হলো আমাদের প্রকৃত বন্ধু। সমাজ ও জীবনকে সুন্দর ও সঠিকভাবে পরিচালিত করতে বই পড়ার বিকল্প নেই।'

কলেজ শিক্ষক পলাশ রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জয়নাল এখনো প্রচুর বই পড়েন। জয়নালের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে গ্রামের সবাই বই পড়তে আগ্রহী হয়েছেন। জয়নালের প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার আমাদের গ্রামে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।'

কলেজ শিক্ষার্থী হযরত আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রামে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা না হলে আমরা নানা ধরনের বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকতাম।'

জয়নাল পৈতৃক সূত্রে বসতভিটার ২ শতাংশ জমি পেয়েছেন। এটাই তার একমাত্র সম্পদ। সেখানে ২টি টিনশেড ঘর রয়েছে তার। এর একটিতে থাকেন তার বৃদ্ধা মা জয়গুণ বেওয়া। অন্যটিকে থাকেন জয়নাল, তার স্ত্রী লিজা আখতার ও ৩ বছরের সন্তান।

Comments

The Daily Star  | English

CAAB, Biman propose fee cuts to boost air cargo

The Civil Aviation Authority of Bangladesh (CAAB) and Biman have proposed reducing landing, parking, and ground handling charges at the country’s airports to make air cargo services cost-effective and resilient amid global disruptions.

6h ago